স্ত্রীকে ছেড়ে পালাতে না চাওয়া মার্কিন নাগরিক রুশ হামলায় নিহত
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় এক মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহত ওই মার্কিন নাগরিকের নাম জেমস হুইটনি হিল। রুশ সামরিক বাহিনীর ব্যাপক গোলাবর্ষণে ইউক্রেনের চেরনিহিভ শহরে মারা যান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাত দিয়ে শুক্রবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানান, ‘ইউক্রেনে একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করছি। ১৭ মার্চ তিনি মারা গেছেন। আমরা নিহতের পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে পরিবারের প্রতি সম্মান জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছু বলার নেই।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৮ বছর বয়সী নিহত ওই ব্যক্তির নাম জেমস হুইটনি হিল। চেরনিহিভ শহরের নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর ভারী কামান হামলায় তিনি প্রাণ হারান।
বিবিসি বলছে, জেমস হিল তার ইউক্রেনীয় স্ত্রী ইরার সাথে গত ডিসেম্বর মাসে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। মূলত স্থানীয় হাসপাতালে ইউক্রেনীয় সঙ্গীর মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের চিকিৎসার জন্যই দেশটিতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ হামলা শুরুর পর তারা আটকা পড়েন।
অবশ্য রুশ হামলা শুরুর পর থেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের অবনতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে হিল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন। গত সোমবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, ‘শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। রাতেও এখানে বোমা পড়ছে। সবদিকেই বিপদ।’
সেখানে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ওয়াইফাই থাকে আমার। এছাড়া আমাদের কাছে মাত্র কয়েক দিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার আছে।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জেমস হিলকে তার পাসপোর্টের সাথে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা থেকে এসেছেন। তার বোন চেরিল হিল গর্ডন বলেছেন, তার ভাই গত ২৫ বছর ধরে ইউরোপজুড়ে শিক্ষকতা করছেন এবং এর বেশিরভাগই ইউক্রেনে।
আরেক বোন কাটিয়া হিল বলেন, কেবল খাবারের প্রয়োজন হলেই তার ভাই ইরাকে বাসায় রেখে বাইরে বের হতেন। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের সেন্স অব হিউমার খুব ভালো ছিল এবং তিনি তার গুণ ধরে রেখেছিলেন। গত কয়েকদিন ছাড়া আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমি মনে করি, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, চেরনিহিভ শহরে জেমস হিলের স্ত্রীর চিকিৎসা চলছিল। কাটিয়া হিলের ভাষায়, ‘তিনি (স্ত্রী) ইরাকে ছেড়ে চলে আসেননি। তিনি কখনোই তাকে পরিত্যাগ করবে না বলে জানিয়েছিলেন।’
টিএম