ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি তুঙ্গে। তখনই ফোন এসেছিল তার কাছে। অপর প্রান্ত থেকে প্রশ্ন ‘ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যেতে ইচ্ছুক?’ বিলম্ব না করে এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালক ক্যাপ্টেন শিবানী কালরা।

সম্প্রতি বাঙালি বিমানচালক মহাশ্বেতা চক্রবর্তীর কথা প্রকাশ্যে আসে। মহাশ্বেতা একটি বেসরকারি সংস্থার বিমানচালক (ফার্স্ট অফিসার)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ফোন পেয়ে তিনি শামিল হন ‘অপারেশন গঙ্গা’য়। বাড়ি ছাড়ার আগে বলতেও পারেননি মা-বাবাকে। টানা ১৫-১৬ ঘণ্টা ককপিটে কাটাতে হয়েছিল শুধু কফি-বিস্কুট খেয়ে।

মহাশ্বেতার সঙ্গে শিবানীর ফারাক হল, দ্বিতীয় জন ক্যাপ্টেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অপারেশন গঙ্গা’-র অঙ্গ হিসাবে চলতি মাসের গোড়ায় ইউক্রেনের ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে নেমেছিলেন শিবানী। তাদের মধ্যে আড়াইশোর বেশি শিক্ষার্থীকে দিল্লিতে নিয়ে আসতে পেরেছেন তিনি। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে এর আগে পাঁচ বার সে দেশে গিয়েছে উদ্ধারকারী দল। তবে শিবানীর জীবনে এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম! 

সংবাদমাধ্যমে শিবানী বলেন, উদ্ধারকাজে যাওয়ার জন্য রাতে বাড়ি ছাড়ার আগে আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরেন মা। সাধারণত এমনটা করেন না। তবে সে সময় মা একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।

উদ্ধারকাজে আগেও গিয়েছেন শিবানী। কোভিডকালে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়েছেন। তবে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে উদ্ধার করার সুযোগ আগে কখনও আসেনি। 

শিবানী বলেন, যুদ্ধের খবর শুনে মা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। বাবা আর ভাইয়ের উদ্বেগও বাড়ছিল। ওখানে (ইউক্রেনে) পৌঁছনো মাত্র আমাকে ফোন করেছিল ওরা।

২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেন ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেন বহু নাগরিক এবং বিদেশি বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি কোনো রকম ইউক্রেনের সীমান্তে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। তারপর সীমান্ত পার হয়ে রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরিতে আশ্রয় নেন। 

উদ্ধারকারী দলের হয়ে ইউক্রেন থেকে শিবানীরা পৌঁছান রোমানিয়ার বুদাপেস্ট। সে অভিজ্ঞতার কথা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন তিনি। এয়ার ইন্ডিয়ার ককপিটে বসা শিবানীর ছবি দেখে তাকে বাহবা দিচ্ছেন অনেকে।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশে ফেরার পর সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন শিবানী। তিনি বলেন, বুদাপেস্টে উদ্ধারকারী দলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। আমাদের দেখে তাদের সকলের ভয়ার্ত মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। তাদের সঙ্গে আলাপের পর বুঝলাম, সকলেই ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন।

শিবানী বলেন, কথাবার্তা বলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আশ্বস্ত করেছিলাম, সকলকেই নিরাপদে দেশে ফিরবেন!

প্রতিশ্রুতি রেখেছেন শিবানী। সে দিন বুদাপেস্ট থেকে ২৪৯ জন ভারতীয় শিক্ষার্থীকে দিল্লিতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। শিবানী বলেন, বিমানে বসার পর ভয় সিঁটিয়ে থাকলেও দেশে ফেরার উত্তেজনায় ফুটছিলেন শিক্ষার্থীরা। আমার পরিবারও কম চিন্তিত ছিল না। তবে সব কিছুই ঠিকঠাক মিটে গেছে।

বুদাপেস্ট থেকে দিল্লিতে অবতরণ করেছিল শিবানীদের বিমান। তার আগে উদ্ধারকাজের দ্বিতীয় পর্বে আবারও বিমান নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন শিবানীরা। এবার হাঙ্গেরির বুখারেস্টে। সেখান থেকেও শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন তাঁরা।

দেশে ফেরার পর অভিনব ভাবে স্বাগত জানানো হয় উদ্ধারকারী দলকে। শিবানীর কথায়, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণের পর সকলেই হাততালি দিচ্ছিলেন। গেট দিয়ে বেরোতেই বাড়ির লোকজনের হাসিমুখ দেখেছিলাম।

এয়ার ইন্ডিয়ায় তিন বছর ধরে কাজ করছেন শিবানী। তবে এ রকমের সুযোগ কখনও হয়নি। শিবানী বলেন, এই প্রথম এ ধরনের অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।

এসকেডি