দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেন ছেড়েছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এক টুইট বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আজ ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারির পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ২০ লাখ ১১ হাজার ৩১২ জন মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়েছেন। ইউক্রেনের শরণার্থীদের গ্রহণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে পোলান্ড। দেশটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ১৩ দিনে ১২ লাখের বেশি মানুষ পাড়ি জমিয়েছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৫০ জন, স্লোভাকিয়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৫ জন এবং রাশিয়ায় ৯৯ হাজার ৩০০ জন ইউক্রেনীয় ঢুকে পড়েছে।

ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোববার পর্যন্ত মলদোভা ও রোমানিয়া ৮২ হাজারের বেশি করে শরণার্থী গ্রহণ করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে আসা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে গেছেন। 

এর আগে, রোববার গ্রান্ডি বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকটে জ্বালানি জোগাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। মলদোভা, পোলান্ড এবং রোমানিয়া সফর শেষে মঙ্গলবার অসলোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এটা থামছে না।

ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বসনিয়া এবং কসোভো যুদ্ধের কথা বলেন গ্রান্ডি। তিনি বলেন, সেই সময় সম্ভবত ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছিল। তবে এতসংখ্যক মানুষের দেশ ছাড়তে সময় লেগেছিল প্রায় আট বছর। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল শরণার্থীদের এমন ঢল দেখলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবার প্রথম ইউরোপ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনএইচসিআরের এই প্রধান।

মানবিক করিডোর ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কয়েক দফার চেষ্টা রাশিয়ার অনবরত গোলাবর্ষণে ব্যাহত হয়। এরপর মঙ্গলবার মানবিক করিডোর চালু করার পর প্রথমবারের মতো স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের একটি দল ইউক্রেনের সুমি শহর ছেড়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চেরিহিভ, সুমি, খারকিভ, মারিউপোল এবং রাজধানী কিয়েভ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালু করা হয়েছে।

সুমি ছাড়াও রাজধানী কিয়েভের পশ্চিমের শহর ইরপিন থেকেও একদল বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলের প্রধান ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, রোমানভিকা গ্রামের ভেতর দিয়ে শহরের জনসংখ্যাকে কিয়েভ শহরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানকার ১৫০ জনের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রুশ সৈন্যদের গোলাবর্ষণের কারণে এ ধরনের করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। রাশিয়ার সংবাদসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, মঙ্গলবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে গোলাবর্ষণ বন্ধ রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী।

এক টুইটে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা ইতোমধ্যে সুমি থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বেসামরিক নাগরিকদের পোলটাভা (মধ্য-ইউক্রেনে) শহরে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছি। ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলেও মানবিক করিডোর চালুর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।

এসএস