ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির ভূখণ্ডে রুশ ট্যাংক ও সামরিক যানের উপস্থিতি খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৩ দিন আগে হামলা শুরুর পর থেকেই এসব ট্যাংক ও সামরিক যান রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী এলাকাসহ ইউক্রেনের বহু শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

তবে এসব সামরিক যানের সবগুলোতেই বাইরের অংশে ইংরেজি ‘জেড’ অক্ষর লেখা। সামরিক যানগুলোর গায়ে রহস্যময় এই অক্ষর বা চিহ্ন ঠিক কী কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে বা এটি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে সেটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল। এছাড়া কেবল রুশ সামরিক যানই নয়, ইউক্রেনে মস্কোপন্থিদের পোশাকেও রয়েছে এই ‘জেড’ চিহ্ন।

মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পাওয়া নানা ভিডিও ফুটেজ আর ছবি থেকে উঠে এসেছে চমকপ্রদ এই তথ্য। আর রহস্যময় ‘জেড’ চিহ্ন নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর অর্থ কী?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালিনা স্তারোভোইতোভা ফেলো কামিল গালিভের তথ্য অনুযায়ী- ইউক্রেনের উদ্দেশে রুশ সামরিক যানগুলো ছেড়ে যাওয়ার আগে সেগুলোতে ‘জেড’ চিহ্ন লিখে রাখা হচ্ছে। অনেকে আবার জেড চিহ্নকে ‘জা পোবেডি’ (বিজয়) হিসেবে উল্লেখ করছেন। অনেকে আবার এটিকে ‘জাপাড’ (পশ্চিম) বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে মনে করছেন।

কামিল গালিভ আরও বলেছেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্ভাবিত এই প্রতীকটি নতুন রুশ আদর্শ ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।’

অবশ্য রুশ এই প্রতীকের অনেক সমর্থক খুঁজে পাওয়া গেছে। রাশিয়ার অনেক বেসামরিক নাগরিক এবং ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় তাদের গাড়িতে ‘জেড’ চিহ্ন ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

অবশ্য পর্যবেক্ষকদের অনেকেই আবার বলছেন যে, এই ধরনের চিহ্নগুলো রুশ সহযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব যানবাহন শনাক্ত করতে এবং ফ্রেন্ডলি ফায়ার এড়াতে সংকেত হিসেবে কাজ করে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রুশ সামরিক যানগুলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করার পর সেগুলোর গায়ে প্রথম ‘জেড’ প্রতীকটি দেখা যায়। বেশ কিছু টুইটে দাবি করা হয়েছে যে, সামরিক বাহিনীর পদাতিক ইউনিটকে বোঝাতেই এই চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

অবশ্য রুশ সামরিক যানে জেড প্রতীকের ব্যবহার এবারই প্রথম নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়া কতৃক ক্রিমিয়া দখলের সময়ও রুশ সামরিক যানগুলোর গায়ে ‘জেড’ চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

সংবাদমাধ্যম বলছে, যেকোনো যুদ্ধের সময়েই কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই সব সংকেতের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভাবে হামলা পরিচালনা করতে পারে সামরিক বাহিনী।

মূলত, যুদ্ধক্ষেত্রে কোন পথ দিয়ে যেতে হবে, মুখোমুখি পড়ে যাওয়া ট্যাংক নিজের দেশের নাকি শত্রুপক্ষের, কোন ধরনের চিহ্ন দেখলেই আঘাত হানতে হবে, এসব বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের এমন সংকেত যুদ্ধে বরাবরই কার্যকর।

টিএম