কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত, বাদ পড়েনি প্রসূতি ক্লিনিকও
হামলার ষষ্ঠ দিনে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে ওঠে রাজধানী কিয়েভ। এদিন (মঙ্গলবার) অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। কিয়েভ বাদেও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে এদিন রুশ হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ৩৫ জন। সোমবারও শহরটিতে রুশ আগ্রাসনে ১১ জন নিহত হন। জানায় বার্তা সংস্থা সিএনএন।
মঙ্গলবার কিয়েভের বেবিন ইয়ার স্মৃতিসৌধের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলা হয় কিয়েভ টিভি টাওয়ারে। বাদ যায়নি প্রসূতি ক্লিনিকও।
বিজ্ঞাপন
বেবিন ইয়ার স্মৃতিসৌধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রধান রাব্বি (ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা) মোশে রেউভেন আজমান। নিজ ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এখানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।’
‘রাশিয়ান সেনাবাহিনী, যারা ১৯৪১ সালে ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে লড়াই করেছিল, তারা কিয়েভ, খারকিভ, ওডেসার বেসামরিক লোকদের ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে। এইমাত্র বেবিন ইয়ারে গোলা বর্ষণ হয়েছে। তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এখানে আঘাত হেনেছে।’
তিনি বলেন, বেবিন ইয়ার একটি পবিত্র জায়গা। যেখানে দুই লাখ নিরীহ মানুষ চিরনিদ্রায় শায়িত আছে। আমি ক্রমাগত ইহুদিদের কাছ থেকে কল পাচ্ছি। শুধু ইহুদি নয়, ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ানরা, কিয়েভজুড়ে সাহায্যের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। তাদের মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন।
‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নীরব ছিলাম, আমি আর থাকব না। আমি আপনাকে বলছি, প্রিয় রাশিয়ানরা, প্রিয় ইহুদিরা, যারা সামরিক বাহিনী সঙ্গে জড়িত; মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এটা বন্ধ করুন। আমি মরতে ভয় পাই না। আমি দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না যে রাশিয়ার গোলাগুলিতে আমি মারা যেতে পারি‘— বলেন মোশে রেউভেন আজমান।
এদিকে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিয়েভ টিভি টাওয়ারের খুব কাছে বড় ধরনের দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে সেখানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। বিস্ফোরণের কারণে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারে ব্যাঘাত ঘটে।
ইউক্রেনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে নিশ্চিত করেছে। তবে কিছুক্ষণ পরই দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানায়, বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া কিয়েভের কাছে একটি বেসরকারি প্রসূতি ক্লিনিকেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। অ্যাডোনিস ম্যাটারনিটি ক্লিনিকের প্রধান ভিটালি গিরিনের ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে সিএনএন এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ভিটালি গিরিনের ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রসূতি ক্লিনিকে আঘাত করেছে। অনেক ক্ষতি হলেও ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। ক্লিনিকে থাকা সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার নাকি ইউক্রেনের ছিল, তা জানা যায়নি। এমনকি এ সময় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না— সে বিষয়েও সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু পর থেকে ১৩৬ বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে ১৩ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। বার্তা সংস্থা আল-জাজিরা এমন তথ্য দিলেও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এমএআর/এমএইচএস