ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালাবেন পুতিন?
রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার মুখে মাত্র চারদিনেই বদলে গেছে ছবির মতো দেশ ইউক্রেনের চেহারা। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে খারকিভসহ পূর্ব ইউক্রেনের একাধিক শহর। রাস্তায় ট্যাংকের গর্জন, আকাশে যুদ্ধবিমান-হেলিকপ্টারের চক্কর। যখন-তখন উড়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্র। রুশ বিমানের নিক্ষেপ করা বোমা দফায় দফায় আঘাত হানছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও।
এবার কী ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন? রোববার রাশিয়ার পরমাণু প্রতিরোধ বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। তার এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে নতুন আশঙ্কা। পুতিনের তীব্র সমালোচনা করে হোয়াইট হাউস বলেছে, পরমাণু হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া এতদিন মূলত ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটি ও পূর্ব সীমান্তবর্তী শহরগুলোকেই লক্ষ্য করে হামলা করছিল রাশিয়া, কিন্তু রোববার দেশটির একটি গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় রুশ সেনারা। দফায় দফায় হামলা হচ্ছে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের অন্যান্য শহরের আবাসিক ভবনগুলোতেও।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভ রোজেনবার্গ জানিয়েছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে অনেকবারই আমি মনে করেছি - ‘পুতিন হয়তো এই কাজটি করবেন না।’ কিন্তু এরপরই পুতিন সেদিকেই গেছেন এবং ওই কাজটিই করেছেন।
তার ভাষায়, ‘মনে করেছিলাম, পুতিন হয়তো কখনোই ক্রিমিয়া দখল করবেন না। কিন্তু তিনি সেটি করেছেন। ভেবেছিলাম, তিনি হয়তো কখনোই ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াবেন না। কিন্তু তিনি সেটিই করেছেন।’
তিনি আরও বলছেন, ‘কখনোই করবেন না’, এই কথাটি অন্তত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বেলায় খাটে না। আর এখানেই একটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামনে আসছে যে, ‘পরমাণু বোমা হামলা চালাতে প্রথমেই বোতামটি হয়তো কখনোই চাপবেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন... কিন্তু আসলেই কী তাই?’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঘিরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ‘আক্রমণাত্মক বিবৃতি’ এবং মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পুতিন।
রোববার এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অবৈধ সব নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সবাই খুব ভালোভাবে অবগত আছেন। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে বৈরীতাপূর্ণ ব্যবস্থাই নিচ্ছে না, বরং নেতৃস্থানীয় ন্যাটো দেশগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা আক্রমণাত্মক বিবৃতিও দিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ও নোভায়া গেজেটা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতোভ বলছেন, ‘পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার বিষয়ে পুতিনের দেওয়া নির্দেশকে সরাসরি পরমাণু যুদ্ধে হুমকির মতো শোনা যাচ্ছে।’
তার ভাষায়, ‘এটি একটি হুমকি যে, রাশিয়ার সাথে যদি তার ইচ্ছা মতো আচরণ না করা হয় তবে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি পরমাণু হামলা চালানোর বিকল্পটি বেছে নিয়েই থাকেন, তাহলে তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে থাকা কেউ কী তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করবে? নাকি তাকে থামাবে?
উত্তরে দিমিত্রি মুরাতোভ বলছেন, ‘রাশিয়ার রাজনৈতিক অভিজাতরা কখনোই জনগণের সাথে থাকে না বা সংশ্লিষ্ট না। তারা সবসময় শাসকের পক্ষ নিয়ে থাকে।’ তার ভাষায়, ‘আর প্রেসিডেন্ট পুতিনের রাশিয়ায় শাসকই সর্বশক্তিমান।’
তবে পরমাণু হামলার আশঙ্কা ও ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতির মধ্যেও আশার কথা হলো, প্রথমে আপত্তি জানিয়েও পরে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন সরকার। সোমবার এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই বৈঠকে কোনো সমাধান পাওয়া গেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির লাখ লাখ মানুষ হয়তো স্বস্তি পাবেন। তাহলে হয়তো পরমাণু হামলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে দেখা দেওয়া শঙ্কা কমে যাবে। আর না হলে সবাইকেই মনে রাখতে হবে- ‘কখনোই করবেন না’, এই কথাটি অন্তত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বেলায় খাটে না।
টিএম