রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বৃহস্পতিবার দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তিন দিক থেকে অভিযান শুরুর পর এখন রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে গ্র্যাড মিসাইল ছুড়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সৈন্যরা।

রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন। এ সময় কিয়েভের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলার খবর পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, বিবিসির ইউক্রেন সার্ভিসের সম্পাদক মার্তা শোকালো বলেছেন, ইউক্রেনে আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। তিনি বলেন, আমি একজন সহকর্মীর কাছ থেকে ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের ঘোষণার বার্তা পাওয়ার পর রাতে জেগে ছিলাম। এরপরই শুরু হয় বিস্ফোরণ।

তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। শহরের বিভিন্ন অংশের লোকজন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে যে তাদের কাছাকাছি বিস্ফোরণ ঘটছে।

মার্তা শোকালো বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলের সম্মুখভাগ নয়, বরং কিয়েভ আক্রমণের মুখে ছিল। এটি বুঝতে পারাটা ছিল বড় ধাক্কা। ইউক্রেনে আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।
 
‌‘এখানে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং ইন্টারনেট কাজ করছে না। আমরা সত্যিই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। দেশে আতঙ্কের হাওয়া বইছে, এখন আমরা জানি গোটা দেশ আক্রমণের মুখে।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ এবং লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েছে।
 
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পর ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আক্রমণ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য এবং ১০ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছে।

পূর্ব ইউরোপে শত শত যুদ্ধবিমান-জাহাজ মোতায়েন ন্যাটোর

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর পূর্ব ইউরোপের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওই অঞ্চলে কয়েক শ যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জোটের মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর চরম আঘাত এসেছে। রাশিয়া তার সামরিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ইতিহাস নতুন করে লেখার উদ্যোগ নিয়েছে এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেছে।’

এখনো ইউক্রেন ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশ এই জোটের পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গে রাশিয়াকে এককভাবে দায়ী করে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘এটি একটি ইচ্ছাকৃত ও ঠাণ্ডা মাথার আগ্রাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই আগ্রাসনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল এবং বিনা উস্কানিতে ঘটা এই হামলার কারণে ইউক্রেনের অনেক নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাবেন।’

পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকাতে পোল্যান্ড ও ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চলের ৪ সদস্যরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার সমন্বয়ে নতুন একটি বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে ন্যাটো। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই অঞ্চলে কয়েক শ’ যুদ্ধবিমান ও জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন জোটের মহাসচিব।

এসএস