ওমিক্রনের যেসব লক্ষণের কথা জানালেন ড. বিজন কুমার
সর্দি-জ্বরের সঙ্গে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের উপসর্গের মিল রয়েছে। এ কারণে অনেকে পাত্তা দিচ্ছেন না, করছেন না করোনা পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরীক্ষা না করানোয় সংক্রমণ বাড়ছে।
ওমিক্রন নাকি সাধারণ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত— কীভাবে বোঝা যাবে, তা পরিষ্কার করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন ওমিক্রনের নানা উপসর্গের কথা।
বিজ্ঞাপন
ড. বিজন কুমার বলেন, ওমিক্রনের লক্ষণ বা উপসর্গ খুঁজে বের করা অনেকটাই কঠিন। কারণ সাধারণ সর্দি-জ্বর ও ফ্লু ভাইরাসের সঙ্গে এটি অনেকটাই মিশে গেছে। কারণ হলো ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির অসংখ্যবার মিউটেশন (রূপ পরিবর্তন) হয়েছে। ফলে বেশকিছু ভেরিয়েশন আমরা দেখতে পেয়েছি। শুরুতে আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা আর এখন ওমিক্রন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহের সাথে অনেকটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর ফলে কিন্তু ভাইরাসটির উপসর্গেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। শুরুর দিকে আমরা জানতাম করোনা মানেই কাশি আর শ্বাসকষ্ট। আমরাও শুরু থেকে এমনটাই দেখেছি। কিন্তু এখন ওমিক্রন আমাদের যে ধরনের উপসর্গ দেখাচ্ছে, তা অনেকটা ঠান্ডা লাগার যে কিছু উপসর্গ হয়, অনেকটা সেরকমই। যে কারণে সাধারণ মানুষ অনেকটাই কনফিউজড (বিভ্রান্ত) আসলেই এটি ওমিক্রন নাকি সাধারণ ঠান্ডা, যা আমরা শীতকালে দেখে থাকি!
বিশিষ্ট এ অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, কীভাবে ওমিক্রনকে দ্রুত চেনা যাবে বা এর লক্ষণ-উপসর্গ কেমন, বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। কিন্তু সাধারণত ভাইরাস যখন মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়, তখন তার উপসর্গ নির্ভর করে ভাইরাসটি দেহের কোন টিস্যুকে ড্যামেজ করছে। যেমন ডেল্টা ধরন সাধারণত ওই স্থানে অ্যাটাক করত, যেখানে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের এক্সচেঞ্জ হতো। যে কারণে ডেল্টায় আক্রান্ত হলে মানুষের কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেশি হতো। কিন্তু ওমিক্রনে ম্যাসিভ মিউটেশনের জন্য কিছুটা ব্যতিক্রম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি এ পর্যন্ত ওমিক্রনেরই ১৫টি মিউটেশন হয়েছে, যা ডেল্টাতে হয়েছে মাত্র দুটি। এত পরিমাণ মিউটেশনের ফলে ওমিক্রন আমাদের শ্বাসতন্ত্রের একটু উপরিভাগে অবস্থান করছে। ফলে সাধারণ ফ্লু ভাইরাসে যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, ওমিক্রনেও প্রায় সেগুলোই দেখা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ওমিক্রনের যেসব উপসর্গ আমরা দেখেছি, তার অন্যতম হলো নাক দিয়ে পানি পড়া, এতে করে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও গলার মধ্যে খুসখুস করে। ফ্লু ভাইরাসে কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা-জ্বর হয়, ওমিক্রনে আবার জ্বরের চেয়ে মাথাব্যথাটা বেশি হচ্ছে। মাথাব্যথার সঙ্গে নাক নিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গলার ভেতরে এক ধরনের চুলকানি অনুভূত হয়, সঙ্গে কাশিও হয়। এসব উপসর্গ দেখে ওমিক্রন সংক্রমণ বোঝা যায়।
বিজন কুমার শীল বলেন, যখন কোনো দেশে কোনো একটি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে, অর্থাৎ এটি যখন মহামারি আকারে চলে যায়, তখন যদি ওই রোগের সঙ্গে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মিলেও যায়, তখন ধরা হয় যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে যাওয়া রোগই হয়েছে। কারণ, এ ভাইরাসটিই এখন সারা দেশে, সারা পৃথিবীতে ছড়াচ্ছে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই, এর সঙ্গে এ মুহূর্তে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মিল থাকলেও ধরে নিতে হবে এটি ওমিক্রন।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে ওমিক্রন হলে আমি যতটুকু দেখেছি প্রচুর মাথাব্যথা হয়, এবং এরপরই শুরু হয় নাক থেকে পানি পড়া। একইসঙ্গে গলার মধ্যে খুসখুস করে। এসব উপসর্গ যদি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ওমিক্রন হয়েছে।
টিআই/আরএইচ