রোগীদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেন নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেই অভিযোগের আগুনেই যেন এবার ঘি ঢাললেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, যিনি নিজেও পেশায় একজন চিকিৎসক। অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও যদি কখনো চিকিৎসক দেখাতে যাই, আমাকেও খসখস করে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে দেন। ভালো করে একটু সময়ও দেন না। প্রেসক্রিপশনের বাইরে কোনো পরামর্শও দেন না।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দেশে প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, অসুস্থতার একটি বিরাট অনুষঙ্গ হলো আমরা কেমন জীবনযাপন করি বা আমাদের লাইফস্টাইল। যারা সঠিকভাবে জীবনযাপন করেন না, তাদেরই অনেকটা ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে যেতে হয়। কিন্তু সঠিক লাইফস্টাইলটাই তো আমাদের অনেকাংশে সুস্থ করে দিতে পারে। জীবনযাপন পদ্ধতিটাকে বদলে ফেলে একদম ভালো হয়ে যাওয়া সম্ভব, ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই জায়গাটিতে চিকিৎসকদের বিশাল একটি ভূমিকা রয়েছে। আমরা শুধু খসখস করে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে দিলাম, সঠিক জীবনযাপন নিয়ে রোগীকে কিছু বললাম না, সেটা তো হলো না। যদিও আমাদের চিকিৎসকদের আসলে এতটা সময় থাকে না, তাদেরকে অল্প সময়ে অনেক রোগী দেখতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে রোগীদের আলাদা জীবনাচরণ নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক যদি প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি রোগীকে বলে দেন যে, এই ওষুধগুলো লাগবে না যদি আপনি এই কাজগুলো করতে পারেন, তাহলে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই পাল্টে যাবে। আমাদেরকে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, সুস্থ থাকতে হলে জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন খুবই জরুরি বিষয়। তাই আমাদের নতুন কারিকুলামে স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটা বিষয় যোগ করতে যাচ্ছি। সেখানে যা থাকবে তা থেকে শিক্ষার্থীরা জানবে, শিখবে এবং সেইভাবে তারা চলতে পারবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় কারিকুলামে যুক্ত করা হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন হবে। সচেতন হলে তারা বেশি সুস্থ থাকবে।

দেশে স্বাস্থ্য সেবায় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। একইসঙ্গে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সদ্য স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার পর অর্থের জোগান একটা বড় বিষয়। সেজন্য স্বাস্থ্য খাতে এমন সব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যাতে স্বাস্থ্য সেবার খচর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি।

সম্মেলনে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, আইসিডিডিআরবি-র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এ মালেক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক ডা. জিয়াউল মতিন, আইসিডিডিআরবি-র সিনিয়র ডিরেক্টর শামস এল আরেফিন, আইসিডিডিআরবি-র অসংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ও অর্গানাইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ, অ্যামিনেন্সে ইন্টার ন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ও অর্গানাইজিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি ডা. শামীম হায়দার তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ইএএসডির উপদেষ্টা আব্দুন নূর তুষার।

প্রসঙ্গত, ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই সম্মেলন ২৮ জানুয়ারি (শুক্রবার) শেষ হয়। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

টিআই/এইচকে