টিকায় বাড়ছে আগ্রহ, জটিলতায় নিবন্ধনে ধীরগতি
করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম নিয়ে শুরুতে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা, ভয়-আশঙ্কা ও গুজব ছড়ালেও পর্যায়ক্রমে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দুজন প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩ শতাধিক চিকিৎসক প্রথম দিনে টিকা নেওয়ায় এবং তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হওয়ায় টিকার ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা জন্মাতে শুরু করেছে।
এদিকে টিকায় আগ্রহ বাড়লেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অ্যাপ যুক্ত না হওয়া এবং ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ঘুরে দেখা গেছে, যেসব ক্যাটাগরিতে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে, তার সবগুলো এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি। নিবন্ধন করতে গেলে অনেকের ক্ষেত্রেই ‘দুঃখিত এই মুহূর্তে কাজটি সম্ভব হচ্ছে না, কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন’ লেখা ভেসে উঠছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মোবাইল অ্যাপ আসতে আরও সাত থেকে দশদিন সময় লেগে যেতে পারে।
এসব প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি নিবন্ধনে কিছু সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখা অবহিত আছে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা দেওয়া শুরুর আগেই সমস্যার সমাধান হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবার জন্য নিবন্ধন নয়। যারা বয়স্ক ও করোনায় সম্মুখসারীর যোদ্ধা, তারাই নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধন নিয়ে যারা কাজ করছেন আমি বলেছি যে এটার নিয়মিত আপডেট মিডিয়াতে দিতে, এজন্য আমাদের এমআইএস শাখা কাজ করছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি) ডা. মো. মারুফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বেশকিছু সমস্যা পেয়েছি। প্রথমত রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে একটা এরর মেসেজ দেখাচ্ছে যে, এই মুহূর্তে ৫৫ বছরের নিচে রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না। এরকম সমস্যা হওয়ার কারণ হলো ওনার এনআইডি ডাটাবেজটা আমাদের কাছে নেই। আর যাদের দেখাচ্ছে যে, দুঃখিত এখন প্রসেস করা সম্ভব হচ্ছে না, এই সমস্যার কারণ হলো সে হয়তো আগে একবার চেষ্টা করেছিল, কোনো কারণে আগে হয়নি ফলে ব্রাউজার ক্রেশিং প্রক্রিয়ায় ওই মেমরিটা সেভ হয়ে থাকায় সে আর করতে পারছে না।’
‘এজন্য আমরা বলছি যে, ব্রাউজারটি আবার রিফ্রেশ (ctrl+F5) দিলে অথবা ইনকগনিটো মুডে যদি করে, তাহলে এটা হয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো হয়তো অনেকেই বুঝবে না, এজন্য আমরা ডিওআইসিটিকে বলেছি, যেন তারা অটোমেটিক রিফ্রেশের একটা অপশন করে দেয়। তারা বলেছে রবি-সোমবারের মধ্যে সমস্যাটা চলে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটা সমস্যা পেয়েছি, সেটা হলো- ইউনিয়নগুলোর তালিকা এখনও লোড হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ইউনিয়নে তো অনেকগুলো নাম, তাই সংখ্যাটা লোড হতে একটু সময় লাগে। আর ততক্ষণে নেট স্টেবল না থাকার কারণে মোবাইল থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়, তখন আর লোড হয় না। এসমস্যা সমাধানে আমরা বলেছি আপাতত যেন পিসি থেকে চেষ্টা করতে। এই সমস্যাগুলো থাকবে না অ্যাপটা চলে আসলে। অ্যাপ না থাকায় এখন তো ওয়েবসাইট দিয়ে হচ্ছে।’
কবে আসবে অ্যাপ?
করোনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের দিনই নিবন্ধনের অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও আপাতত শুধুমাত্র ওয়েবসাইট থেকেই রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে। ফলে ওয়েবসাইটে ঢুকে নিবন্ধন করতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অ্যাপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মো. মারুফুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের অ্যাপটা প্লে-স্টোরে দিয়েছি, এটা গুগুল থেকে প্লে-স্টোরে অ্যাপ্রুভ হতে আরও হয়তো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। অ্যাপ্রুভ হয়ে গেলেই অ্যাপটা প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অ্যাপটা আরও ২ দিন আগেই প্লে-স্টোরে দিয়েছি, এখন যতদ্রুত সম্ভব যদি অ্যাপ্রুভ হয়। এটা স্বাভাবিকভাবে ৭ থেকে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। সবমিলিয়ে আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আমরা অ্যাপ পেয়ে যেতে পারি। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। আর অ্যাপল বা আইওএসের জন্য এখনও অ্যাপ বানানো হয়নি, ওটা ডেভেলপমেন্ট চলছে।’
৫৫ বছরের নিচে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন নয়
৫৫ বছরের নিচে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন নয় বলে জানিয়েছেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, সম্মুখযোদ্ধারা ছাড়া ৫৫ বছরের নিচে কোনো মানুষ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। তবে ৫৫ বছরের নিচে সম্মুখযোদ্ধাদের তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আইসিটি মন্ত্রণালয় তাদের রেজিস্ট্রেশন আগেই সম্পূর্ণ করে রাখবে বলেও জানান তিনি।
সম্মুখযোদ্ধাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিদের কেন্দ্রীয়ভাবে তালিকা না পাঠানো হলে স্ব-স্ব জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তালিকা দেওয়ার অনুরোধ করছি।
তিন দিনে নিবন্ধন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার জন টিকার পেতে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তবে কেউ নিবন্ধন করতে না পারলে কেন্দ্রে এসে তা সম্পন্ন করে টিকা নিতে পারবেন বলেও জানা গেছে।
দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছিলেন, সকাল দশটা পর্যন্ত টিকা পেতে আগ্রহীদের নিবন্ধন প্রায় ১১ হাজার।
তিনি বলেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি (রোববার) থেকে সারাদেশে একযোগে টিকাদান শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ঢাকায় ৪৯টি কেন্দ্র এবং সারাদেশে ৬১৩টি কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে টিকার দ্বিতীয় চালান আসবে। তবে দিনক্ষণ জানা যায়নি। শুক্রবার পর্যন্ত ৩৬টি জেলায় টিকা পৌঁছেছে। সারাদেশে ৬ হাজর ৯৯০টি টিকার টিম কাজ করবে।
টিআই/জেডএস