ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এ কারণে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

আজ (বুধবার) দুপুরে সারা দেশের করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন জায়গায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি যেন কোথাও জমে না থাকে। ফুলের টব থেকে শুরু করে যে সমস্ত জায়গায় পানি জমে থাকে, সেগুলো যদি আমরা পরিষ্কার করে ফেলি তাহলে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ডেঙ্গু রোগের যে ঝুঁকি, সেটা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, দিনে-রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে ছোট-বড় সবাইকেই শরীর ঢাকা থাকে এমন পোশাক পরতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ খুবই জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মুখপাত্র বলেন, দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা এখন কম, তবে সন্দেহভাজন কারও যদি জ্বর থাকে, তাহলে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষাটিও করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার স্বাস্থ্যবিধি। টিকা গ্রহণের পাশাপাশি আমরা যদি যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করি, নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময় হাত ধুয়ে ফেলতে পারি এবং নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা যদি প্রাত্যহিক কাজগুলো করতে পারি, তাহলে এই অতিমারি নিয়ন্ত্রণ করাটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ২৫৬ জন। এরমধ্যে ঢাকার ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৮০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৬ জন।

এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭ হাজার ৭৭৯ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৭ হাজার ৪২৩ জন। ডেঙ্গুতে এ সময়ে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ১৪৮ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ২০০২ সালে, সেবার ৫৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ছাড়া ২০০১ সালে ৪৪ জন মারা যান। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও করোনা মাহামারি মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে এবার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।

টিআই/এনএফ