ডা. জেসমিন আক্তার (বামে) ও চৌধুরী আসিফ আব্দুল্লাহ (ডানে) /ছবি- ঢাকা পোস্ট

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছিলেন চিকিৎসক চৌধুরী আসিফ আব্দুল্লাহ। তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছিলেন। তবুও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন এই সম্মুখযোদ্ধা। তরুণ এ চিকিৎসকের স্ত্রী ডা. জেসমিন আক্তারও নিরলসভাবে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন। দুজনই অপেক্ষায় ছিলেন কবে টিকা আসবে। 

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে তারা টিকা নেন। দুজনই টিকা নিয়েছেন প্রায় দুই দিন হতে চললো। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এসময়ে ডা. চৌধুরী আসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, ভালো আছি। কোনো সমস্যা হয়নি আমাদের। আশা করছি কোনো সমস্যা হবেও না।

টিকা নেওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের এ চিকিৎসক দম্পতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই টিকার খুবই প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের জন্য খুবই দরকার। কেননা তাদের সব সময় রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে হচ্ছে। টিকা দেওয়া থাকলে অন্তত মনে একটা সাহস কাজ করবে।

ডা. চৌধুরী আসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, আমি খুবই আশাবাদী টিকা শতভাগ কাজ করবে। আমাদের সবার উচিত টিকা নেওয়া। করোনাভাইরাসে আক্রমণের পর একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সুস্থ হয়ে আবারও কাজ শুরু করি। এখন আরও পুরোদমে কাজ করতে পারব।

একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে টিকা গ্রহণের বিষয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. জেসমিন আক্তার বলেন, অনেক ভালো লাগছে টিকা নিতে পেরে। নিজেকে আরও সুরক্ষিত ভেবে কাজ করতে পারব।

তিনি জানান, অনেকেই হয়তো কনফিউশনে আছেন টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা। এখন পর্যন্ত আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আশাকরি কোনো সমস্যা হবেও না।

ডা. চৌধুরী আসিফ আব্দুল্লাহ টিকা সরবরাহ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘অক্সফোর্ডের টিকা খুবই মানসম্মত। আমার বিশ্বাস শতভাগ কাজ করবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, টিকা যেন ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেন। কেননা নিজেকে সুরক্ষার পাশাপাশি অন্যের কাছে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র মাধ্যম এই টিকা। তাই আসুন আমরা সবাই করোনার টিকা নিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত করি।’

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিতে পেরে দারুণ খুশি। কেউ কেউ নিজেদের ভাগ্যবান বলেও মনে করছেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে পাঁচজন টিকা নেওয়াসহ মোট ২৬ জন টিকা গ্রহণ করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪১ জকে টিকা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারটি ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে টিকা দেওয়া হয়। 

এই পাঁচ হাসপাতালে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫৪১ জন টিকা নেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিসের তথ্য মতে, রাজধানীর কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৩৮ জন চিকিৎসক ও তিনজন নার্সসহ মোট ৫৮ জন।

একে/ওএফ