অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে ব্যবহারের উপযুক্ত
বেক্সিমকোর আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ, মানবদেহে ব্যবহারের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
মহাখালীতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল এ টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।'
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'এই ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সেদেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বামানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেই সব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।'
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত এ টিকা সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে করে দেশে আসে। বিমানবন্দর থেকে এই টিকা টঙ্গীতে বেক্সিমকোর গুদামে নেওয়া হয়।
গত ২১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় উপহার হিসেবে ভারত সরকারের পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে করে আসে। সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত, ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ তারই নজির।
প্রথম টিকা নেবেন রুনু বেরুনিকা কস্তা
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বুধবার (২৭ জানুয়ারি)। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। এদিন দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার টিকা নেবেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক নার্স জানান, বুধবার প্রথমে ৩ জন নার্সকে টিকা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এদিন আরও ৩ জন চিকিৎসককেও টিকা দেওয়া হবে। প্রথমে টিকা নেবেন ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। তার পরে টিকা নেবেন ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন ও একই ইউনিটে নার্স রিনা সরকার।
কোন ভ্যাকসিনের দাম কেমন?
মডার্না: বিশ্বব্যাপী যেসব কোম্পানি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মডার্না। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, তাদের ভ্যাকসিন প্রায় ৯৫ শতাংশ (৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ) কার্যকর। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তারা প্রতি ডোজ করোনা টিকার দাম ২৫ থেকে ৩৭ ডলার করে রাখছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার ১৮৮ টাকা থেকে তিন হাজার ১৩৫ টাকা দাঁড়ায়।
ফাইজার-বায়োএনটেক: ফাইজার দাবি, তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। এ টিকায় উল্লেখযোগ্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। ফাইজার বলছে, তাদের এই টিকা করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে ৯৪ শতাংশ কার্যকর। তাদের তৈরি টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়ছে ২০ ডলার করে।
জনসন অ্যান্ড জনসন: মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ ডলার করে।
স্পুতনিক ফাইভ: রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক ফাইভ টিকা ৯২ শতাংশ কার্যকর। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সন্দিহান। স্পুতনিক ফাইভ টিকার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে রাশিয়ার করোনা টিকার প্রতি ডোজের দাম অনেক কম পড়বে।
টিআই/জেডএস