প্রতীকী ছবি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রাফিউল হাসানকে (৩৫তম বিসিএস) বদলি করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অধিদফতর।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ডা. রাফিউল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিব। আপাতত তাকে বরগুনা জেলার একটি মফস্বল এলাকায় বদলি করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন : যৌন হয়রানির অভিযোগ হয়রানিমূলক, দাবি ডা. রাফিউলের

হয়রানির শিকার ওই নারী চিকিৎসক প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি ওই মেডিকেল অফিসার কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে সরকারি চাকরিবিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

আবেদনে ভুক্তভোগী আরও জানান, সম্প্রতি কর্মস্থলে অনুপস্থিতিজনিত কারণে ব্যক্তিগত শুনানি প্রদানের জন্য চলতি বছরের ২৯ আগস্ট তাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ডাকা হয়। এরপর তিনি একজন সিনিয়র চিকিৎসকের মাধ্যমে অধিদফতরের ডা. রাফিউল হাসান সম্পর্কে জানতে পারেন যে তিনি এসব বিষয়ে ভালো জানেন। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যায়। ব্যক্তিগত শুনানির কার্যক্রম সম্পর্কে জানার ব্যাপারে ডা. রাফিউলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন তিনি। রাফিউল তাকে ২৪ আগস্ট সশরীরে তার অফিসে (পরিকল্পনা ও গবেষণা) দেখা করতে বলেন। এ সময় তিনি ভয় দেখিয়ে বলেন যে, সামান্য দেরি করলে ওই নারীর বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

অভিযোগপত্রে তিনি জানান, রাফিউলের কথা অনুসারে নারী চিকিৎসক ওইদিন সাড়ে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে তার সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তিনি ব্যক্তিগত শুনানির ব্যাপারে নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। রাফিউল ওই নারী চিকিৎসককে ঘায়েল করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন। তাকে মানসিকভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন। চাকরি বাঁচাতে চাইলে রাফিউল যা বলবেন সেভাবেই চলতে হবে। তিনি এও উল্লেখ করেন এ ব্যাপারে একমাত্র উনিই সাহায্য করতে পারবেন, তার কথা না শুনলে ভুক্তভোগীর বড় বিপদ হবে।

‘মহাপরিচালকের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঁচজন টপ অফিসারের মধ্যে উনি (রাফিউল) একজন’ বলেও ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করেন তিনি।

ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, নানা কাজে ব্যস্ততা দেখান ডা. রাফিউল। কাজ শেষে তাকে সময় দেবেন বা সাহায্য করবেন বলে ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার অফিসে বসিয়ে রাখেন। ৭টার পর কোনো রকম সাহায্য বা দিকনির্দেশনা প্রদান ছাড়াই ওই নারীকে পরদিন ২৫ আগস্ট সকাল ৯টার আগে অফিসে দেখা করতে বলেন। এ সময় সান্ত্বনা দেয়ার ছলে ডা. রাফিউল তার পিঠে ও ঘাড়ে হাত রাখেন। এতে অস্বস্তিবোধ করেন নারী চিকিৎসক। দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে যান তিনি। এ সময় ডা. রাফিউলও তার সঙ্গে সঙ্গেই অফিস থেকে বের হন।

ভুক্তভোগী আরও জানান, পরদিন রাফিউলের কথামতো অফিস শুরুর আগে উপস্থিত না হয়ে ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে তার অফিসে যান। এ সময় অফিসে ডা. রাফিউল ছাড়া কেউ ছিল না। ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক কেন দেরি করে এসেছেন এ জন্য বিরক্তি ভাব প্রকাশ করেন রাফিউল। এ সময় নানা ধরনের অপমানজনক কথা বলতে থাকেন। দেরি করে আসায় এখন সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানান। বিপদে পড়তে না চাইলে আবার বিকেলে দেখা করতে বলেন রাফিউল। তার বলা কথায় ভয় পান ভুক্তভোগী। তিনি তার কথা অনুসারে ৪টার দিকে দেখা করতে অফিসে যান। এ সময় অফিসে সকলেই ছিলেন। কিন্তু তিনি পাঁচটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন। পাঁচটার পর ধীরে ধীরে অফিসের সবাই একে একে চলে যেতে শুরু করেন।

নারী চিকিৎসক অভিযোগপত্রে আরও বলেন, আমি উনার ডেস্কে উনার সামনের চেয়ারে বসেছিলাম। উনি আমাকে উঠে এসে তার পাশের চেয়ারে বসতে বলেন। আমি এতে অপারগতা প্রকাশ করলে উনি তার চেয়ার থেকে উঠে আমার চেয়ারের পেছনে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং শরীরের স্পর্শকাতর অংশে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উনি আমার কাপড়ের ভেতর দিয়েও হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। আমি ছিটকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে উনি আমার হাত চেপে ধরেন। তার ওয়ার্কিং ডেস্কটি এমনভাবে অবস্থিত যে ঘরে ঢুকে ডেস্কের সামনে না গেলে সেখানে কেউ অবস্থান করছে কিনা বোঝা সম্ভব হয় না। লোকজন ডাকব বললে উনি আমাকে বলেন যে, তার রুম এভাবেই বানানো যেন বাইরে থেকে কেউ দেখতে না পায়। তাছাড়া এখন অফিসে কেউ নেই- এইটাও আমাকে বলেন। অফিসের এই অংশে দরজা খোলা থাকলেও বাইরে থেকে দেখা যায় না। অন্য কেউ আছে কি না বুঝতে পারছিলাম না বলে তার কথায় আরও ভয় পেয়ে চলে যেতে চাইলে তিনি শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে বাধা দেন। বলেন, তার জন্য এইটুকু স্যাক্রিফাইস না করলে তিনি তাকে কেন সাহায্য করবেন? একই সঙ্গে নানা ধরনের চরম অবমাননাকর ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন রাফিউল। এক পর্যায়ে ওই নারী এক প্রকার জোর করে হাত ছুটিয়ে তার রুম থেকে বের হয়ে যান। এ সময় অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ত্যাগ করেন বলে নারী চিকিৎসক অভিযোগে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে রাফিউল ফোন দিলে আর কথা বলেননি ওই নারী। আবেদনে ওই নারী চিকিৎসক তার যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।

টিআই/এইচকে