দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দেশের সার্বিক করোনা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ আশঙ্কার কথা জানান অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দেশে এই বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয় হাজার ৪৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বমোট ২৬টি মৃত্যুর সংখ্যা আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই ৬ হাজার ৪৫০ জন রোগীর বিপরীতে এতো মানুষের মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার কারণ।

নাজমুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল এলে আমরা দেখি যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রূপ নেয়। গত ২০১৯ সালে আমরা দেখেছি যে একটি ডেঙ্গু মহামারি আমাদের কীভাবে আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসেও একই রকম একটি পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। তবে আমরা মনে করি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সেটি মোকাবিলা করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেভাবে করছেন, সে কাজের আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব। এছাড়া, বাড়িতে ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে-বাইরে জমে থাকা যেসব পানি আছে, সেগুলো অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি সময় বাসার বাইরে যদি কেউ অবস্থান করেন, তাহলে বাথরুমের কমোড, প্যান ইত্যাদি ঢেকে রাখতে হবে। পানির পাত্র পরিষ্কার করে উল্টে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য মুখপাত্র বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদেরকে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে শরীর ঢেকে রাখে এমন কাপড় পরিধান করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।

জ্বর এলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কারো শরীরে জ্বর এলেই কেবল করোনা মনে করতে হবে তা নয়। পাশাপাশি কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের যে পরীক্ষাটি আছে, এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি করতে হবে। পরীক্ষাটি সহজেই করা যায়। সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, এ পরীক্ষাগুলো করে ফেলতে হবে।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (১৭ আগস্ট) রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩২৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৩০৬ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন।

এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১১৪ জনে। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৪৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ জন। আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ছয় হাজার ৬৫০ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন পাঁচ হাজার ৫১০ জন রোগী।

টিআই/এসএম