করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম চলছে। শুরুতে টিকা নিতে অনীহা থাকলেও এখন দীর্ঘ লাইনে বৃষ্টিতে ভিজেও টিকা নিচ্ছেন মানুষ। ভেজা শরীরে টিকা নিয়েই বাসায় ফিরছেন তারা। শুরুতে অনাগ্রহ আর এখন বৃষ্টিতে ভিজেই টিকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের ভাষ্য- টিকা না নিয়ে আর উপায় নেই।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টা। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যেই রাজধানীর জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সামনে টিকা গ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন। কেউ ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আবার কেউ ছাতা না থাকায় বাধ্য হয়েই বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অফিসে নিরাপত্তা প্রহরী উসমান মিয়া (৫৫) বলেন, অফিস থেকে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে চাপ আছে, এজন্য সবাই এখন টিকা নিতে আসছেন। এতদিন ভাবছি না দিলেও সমস্যা নেই। কিন্তু এখন যেহেতু সরকারসহ অফিস আদালতগুলোতে কড়াকড়ি করেছে, এজন্য টিকা নিতেই হবে।

টিকা নেওয়ার জন্য কখন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় টিকা নিতে এসেছি। এখন ১টা বাজে। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে পেরেছি। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাচ্ছি, এতেই শান্তি লাগছে।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘণ্টাখানেক ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন লোকজন কিছুটা কম থাকলেও যখন এসেছি, তখন লম্বা লাইন ছিল। পরে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু লোকজন চলে গেছেন। যে কারণে লাইন ছোট হয়েছে। তাই দ্রুত কাছাকাছি চলে এসেছি। কিন্তু সকালে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকটাই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ ২-৩ ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টাও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে।

দেশে টিকা কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু হয়েছে, আগে কেন টিকা নেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচেতনতার অভাব ছিল। এখন অনেকেই সচেতন হয়েছেন। পাশাপাশি সবার কর্মস্থল থেকেও টিকা নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। তাই টিকা না নিয়ে উপায় নেই।

জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের টিকা কেন্দ্রসূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটিতে রোববার (৮ আগস্ট) মোট ১ হাজার ৬০০ ডোজ টিকা এসেছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজের জন্য মর্ডানার এক হাজার ডোজ এসেছে, দ্বিতীয় ডোজের জন্য সিনোফার্মের ৫০০ ডোজ এসেছে এবং প্রথম ডোজ নিয়ে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়াদের জন্য এসেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০০ ডোজ টিকা।

দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে টিকা কার্যক্রম সমাপ্তি শেষে কর্তব্যরত এক সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৭৩ জন টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মর্ডানার টিকা নিয়েছেন ৯৯০ জন, সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ৩৮৩ জন ও অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন ১০০ জন।

তিনি বলেন, আজকের মতো আমাদের টিকাদানের সময় শেষ। আজকে যারা নিতে পারেননি, কাল সকালে এসেই তারা নিতে পারবেন।

টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের তুলনায় টিকা গ্রহণকারী অনেকে বেড়েছে। আজকে যে পরিমাণ মানুষ টিকা এসেছেন, অন্যদিন এরচেয়েও বেশি মানুষ আসেন। এর মধ্যে এসএমএস ছাড়াও আসেন। যারা আগে এসএমএস পেয়েছেন কিন্তু টিকা পাননি, তাদেরকে আমরা টিকা দিচ্ছি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনেই ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ মানুষ টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে চীনের সিনোফার্মের। এছাড়াও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৭৯৮ জন। সবমিলিয়ে দেশে গত একদিনে টিকা নিয়েছেন ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ জন।

অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে টিকা গ্রহণে বরাবরের মতো এগিয়ে আছে পুরুষরা। ২৭ লক্ষাধিক টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ টিকা নিয়েছেন ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৮ ও নারী ১২ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৬ জন। তাদের মধ্যে সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৭ জন পুরুষ ও ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৪ জন নারী। আর মর্ডানার টিকা নেওয়াদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬১ হাজার ১৯ জন ও নারী রয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৭০২ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৯ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৭ হাজার ৩৩ জন। আর মর্ডানার টিকা নিয়েছেন ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৮ জন।

টিআই/ওএফ