টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ঔষধ প্রশাসনের গাইডলাইন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের পর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে পরবর্তীতে করণীয় শীর্ষক একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে ঔষধ প্রশাসন। গাইডলাইনটি বুধবার অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যেকোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে বিষয়টি দেখাশোনার জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন যে এটা কি ভ্যাকসিনের কারণে হলো, না অন্যকোনো কারণে হলো।
বিজ্ঞাপন
যে স্থানে টিকা দেওয়া হবে সেই স্থানে ব্যথা হতে পারে। হালকা জ্বর আসতে পারে। মাথাব্যথা করতে পারে। এছাড়া স্বল্প পরিমাণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ডিজি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
‘এটা করার পর আমাদের ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বরাবর একটা রিপোর্ট আসবে। তারপর আবার আমাদের একটি জাতীয় কমিটি আছে, তারা বিষয়টি আবারও এনালাইসিস করবে এবং ফাইনালি রেগুলেটরি অ্যাকশন নেয়া হবে। এরপর আবার এটিকে আমাদের আন্তর্জাতিক মনিটরিং সেলে শেয়ার করব।’
টিকা নিলে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে স্থানে টিকা দেওয়া হবে সেই স্থানে ব্যথা হতে পারে। হালকা জ্বর আসতে পারে। মাথাব্যথা করতে পারে। এছাড়া স্বল্প পরিমাণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, শুধু টিকা না, যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আমার মনে হয় খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে। আমাদের মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।
আমাদের মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য উপজেলা কেন্দ্রে যত দূর সম্ভব ব্যবস্থা রাখা হবে। এর ব্যাকআপ হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে কমিটি থাকবে।
২৫ জানুয়ারির মধ্যেই ভ্যাকসিন আসবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চলতি (জানুয়ারি) মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আসবে।
তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।
সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব
ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাসের টিকা পেতে প্রত্যেককেই অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যক্তি নিজে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অ্যাপটা সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। যারা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
টিকা পেতে রেজিস্ট্রেশন শুরু ২৬ জানুয়ারি
করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে। সেখান থেকে সরকার টিকাগ্রহীতার সম্পর্কে সব তথ্য পাবেন। একইভাবে যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, আইসিটি ডিভিশন অ্যাপস তৈরির কাজ করছে। অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। এটির মাধ্যমে প্রত্যেককেই ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।
জনসমাগম রোধে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে জানুয়ারি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই দেশে ভ্যাকসিন আসবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই জাতীয়ভাবে এ টিকা দেওয়া শুরু হবে এবং প্রথম দফায় ৫০ লাখ মানুষ টিকা পাবেন।
টিকা ব্যবস্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা, উৎসুক জনতার ভিড় এবং অতিরিক্ত জনসমাগম রোধে কাজ করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো, আমরা সবকিছুতেই একটু বেশি আগ্রহী। আমরা চিন্তা করছি যে, ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় তা দেখার জন্য ও নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত যে জনসমাগম হবে, তা রোধ করতে সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
টিআই/এমএআর/