ডা. মুশতাক হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইইডিসিআর

সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে যে টিকাই প্রথমে আসুক, সরকার সেটা কিনে নেবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সবাইকে টিকা দেওয়ার পর সেটা বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে— বলছেন আইইডিসিআর’র প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।

চলতি মাসেই ভারত থেকে আসছে না করোনাভাইরাসের টিকা। জানুয়ারিতে সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা আসার কথা থাকলেও সহসাই তা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভারতের টিকার চাহিদা মেটানোর আগে অন্য দেশকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা না দেওয়ার বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের বক্তব্য এ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদিও পরবর্তীতে টিকা দেওয়ার বিষয়ে দেশটির সরকার ও সেরাম ইনস্টিটিউট ‘ইতিবাচক’ বক্তব্য দিয়েছে।

ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাপ পার করছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ধাপে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। সঙ্গে চলছে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতিও। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আরও ৭৮৫ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল সাত হাজার ৭৩৪ জনে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৬৯০।

প্রতিনিয়ত ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। এটা সার্ভিলেন্সের মতো নিয়মিত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশকে অনুরোধ জানিয়েছে। ভাইরাসের ধরন শনাক্তের জন্য একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভাইরাস যখন আমরা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করব, তখন কিছু কিছু নমুনা সিকোয়েন্স করব। এভাবে ধারাবাহিকভাবে বা নিয়মিত করলে এটাকে একটা নজরদারির মধ্যে রাখা যাবে

ডা. মুশতাক হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইইডিসিআর

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি, করোনার নতুন স্টেইন (পরিবর্তিত রূপ), ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি এবং কারা এগুলো আগে পাবেন, বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন বিক্রির সুযোগসহ নানা বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকা পোস্ট-এর মুখোমুখি হন বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয় ভারতেও আছে, বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশে যদি সংক্রমণের মাত্রা বাড়ে সেক্ষেত্রে ভারতেরও বাঁচার সম্ভাবনা নেই। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। ঢাকা পোস্ট-এর পাঠকদের জন্য সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

ঢাকা পোস্ট : করোনার নতুন প্রকৃতিতে আমাদের করণীয় কী হবে?

মুশতাক হোসেন : করোনার নতুন প্রকৃতি তো বাংলাদেশে ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সব দেশেই আছে। এটা নিয়ে নতুন করে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা অলরেডি বিপদের মধ্যেই আছি। নতুন ভাইরাস বলে এখনও কিছু প্রমাণিত হয়নি। শুধু একটা বৈশিষ্ট্য আছে, যেটা বলা হচ্ছে দ্রুত ছড়াচ্ছে। দ্রুত ছড়ানোটা কি ভাইরাসের পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে, নাকি ক্রিসমাসে বেপরোয়া চলাফেরার কারণে হচ্ছে— সেটা এখনও প্রমাণিত হয়নি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ক্রিসমাসের আয়োজনটা যখন শেষ হবে, তার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বুঝা যাবে এটা কোন কারণে ছড়াল। এটা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ভাইরাসের কারণেই হোক বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক করোনার সংক্রমণ যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় বেড়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, মানুষের আচরণটাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। তবে ভাইরাসের পরিবর্তনটা হবে সবসময়। হয় এটা বেড়ে যাবে, না হয় ভাইরাসটা দুর্বল হয়ে যাবে— এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

প্রতিনিয়ত আমাদের ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। এটা সার্ভিলেন্সের মতো নিয়মিত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশকে অনুরোধ জানিয়েছে। ভাইরাসের ধরন শনাক্তের জন্য একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভাইরাস যখন আমরা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করব, তখন কিছু কিছু নমুনাকে সিকোয়েন্স করব। এভাবে ধারাবাহিকভাবে বা নিয়মিত করলে এটাকে একটা নজরদারির মধ্যে রাখা যাবে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ করলে নজরদারি করা কঠিন হয়ে যাবে। পরিবর্তন তো হঠাৎ করে হয় না, নজরদারির মধ্যে থাকলে এটাকে দেখা যাবে কখন পরিবর্তন হচ্ছে। এভাবেই সংক্রমণ যেন না হয় সেজন্য মানুষকে আইসোলেটেড করে রাখতে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে রোগের ওপর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

আইসিইউ বেডের সংকট হওয়ার তো সুযোগ নাই, আমাদের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরে অব্যবহৃত অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বেড আছে। এখনও সেগুলোর প্যাকেট খোলা হয়নি। বলা হচ্ছে, যেখানে আইসিইউ নেই, সেসব নতুন জায়গায় এগুলো দেয়া হবে। আমি মনে করি এটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন জায়গায় স্থাপনের চেয়ে ঢাকার বাইরে যেসব মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউ চলছে সেখানে এগুলো দেওয়া উচিত

ডা. মুশতাক হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইইডিসিআর

ঢাকা পোস্ট : করোনার প্রকোপ যখন বেশি ছিল তখন হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংকট দেখা দেয়। আপনি বলছেন, শীতের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আইসিইউ বেড বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি-না? এক্ষেত্রে আবার দক্ষ জনবলেরও সংকট আছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মুশতাক হোসেন : নতুন করে কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, আমাদের শুধু আইসিইউ বেড স্থাপন করলেই চলবে না, আমাদের দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। আইসিইউগুলো তো আর যন্ত্রপাতি চালাবে না, মানুষকেই চালাতে হবে। জনবল নিয়োগ দিয়ে, দুই সপ্তাহের ট্রেনিং দিয়েও সেটা করা যায় না। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, যেসব হাসপাতালে আইসিইউ ভালোভাবে চলছে, সেখানে বেড বাড়ালে অপেক্ষাকৃত কম জনবল দিয়েও আইসিইউ সেবা দেওয়া যাবে। দক্ষ লোকদের তত্ত্বাবধানে যদি ডাক্তার-নার্সরা কাজ করেন, তাহলে নতুন যারা আসবেন, তাদের জন্য সেবা দেওয়া সহজ হবে। কিন্তু একেবারে নতুন আইসিইউ খুলতে গেলে যেখানে আইসিইউ চলছে, সেখান থেকে লোক নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আবার এ জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) যে আইসিইউ বেডগুলো পড়ে আছে, সেগুলো নতুন জায়গায় না দিয়ে ঢাকার বাইরের বড় বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে আইসিইউ সেবা চালু আছে সেগুলোতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে কোন জায়গাগুলোতে বেশি সংকট দেখা দিচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে এসব এলাকার বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডগুলো বসানো যেতে পারে। এসব হাসপাতালে প্রশিক্ষিত জনবল আছে, তাদের তত্ত্বাবধানে আইসিইউ সেবা দেওয়া সম্ভব। তাহলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে এবং ওইসব এলাকার মানুষ সহজেই সেবা পাবেন।

মহামারিকালে আমরা দেখেছি, সংকটাপন্ন রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর হতে হয়েছে। স্থানান্তরের সময় অনেক রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসেন। এক্ষেত্রে কোন কোন হাসপাতালে বেশি রোগী এসেছেন, সেই হিসাবটা নিয়ে ওইসব হাসপাতালে আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে।

প্রথমবার যে টিকাই আসুক, সরকার তো সেটা কিনে নেবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সবাইকে টিকা দেওয়া হয়ে গেলে, তারপর সেটা বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে

ডা. মুশতাক হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইইডিসিআর

আইসিইউ বেডের সংকট হওয়ার তো কোনো সুযোগ নাই, আমাদের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরে অব্যবহৃত অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বেড আছে। এখনও সেগুলোর প্যাকেট খোলা হয়নি। বলা হচ্ছে, যেখানে আইসিইউ নেই, সেসব নতুন জায়গায় এগুলো দেওয়া হবে। আমি মনে করি এটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন জায়গায় স্থাপনের চেয়ে ঢাকার বাইরে যেসব মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউ চলছে, সেখানে এগুলো দেওয়া উচিত। সেখানে যে জনবল আছে, তা দিয়েই আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

ঢাকা পোস্ট : পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে। এক্ষেত্রে করণীয় কী হবে?

মুশতাক হোসেন : আইসিইউ’র পাশাপাশি আমাদের দরকার হাইফ্লো অক্সিজেন। এটার ব্যবস্থা করা গেলে রোগীরা ভালো হয়ে যায়, আইসিইউতে নিতে হয় না। হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা যেখানেই করা হোক না কেন, কোনো জটিলতা ছাড়া সহজেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। আমি মনে করে, আইসিইউ’র চেয়ে বেশি করে হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। যেসব জেলা শহরে এখনও এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে দ্রুত তা করা দরকার। পাশাপাশি সব জায়গায় জেনারেটর দিতে হবে। এমনকি জেনারেটরগুলোতে তেল থাকার বিষয়টাও সবসময় নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে তো দ্রুত জেনারেটর চালাতে হবে, নয়তো মানুষ মারা যাবে। কনস্ট্রাকশন, টেন্ডার— এগুলোর জন্য যেন দেরি না হয়।

ঢাকা পোস্ট : বেসরকারিপর্যায়ে টিকা আমদানির বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মুশতাক হোসেন : বেসরকারিপর্যায়ে টিকা আমদানি হলে ভালো হবে। এটা নিয়ে আমাদের নিয়ম আছে। যদি কেউ টিকা আনতে চায়, তাহলে যে টিকাটা আনবে সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে কি-না, সেক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সাতটি দেশের টিকার লিস্ট আছে। তাদের অন্তত দুটি যদি চালু করে, সেটা আবার আমাদের একটা কমিটি আছে, তারা পরীক্ষা করে অনুমোদন দেওয়ার পরই আনতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে নিয়ম হলো, প্রথমবার যে টিকাই আসুক, সেটা বিনামূল্যে যারা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, তারা পাবেন। যে কোম্পানি সেই টিকা আনবে, সরকার সেটা কিনে নেবে।

ঢাকা পোস্ট : বেসরকারিভাবে আসলে টিকার মূল্য নিয়ে অরাজকতা তৈরি হবে কি-না?

মুশতাক হোসেন : প্রথমবার যে টিকাই আসুক, সরকার তো সেটা কিনে নেবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সবাইকে টিকা দেওয়া হয়ে গেলে, তারপর সেটা বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে লাগামহীন মুনাফা অর্জনের সুযোগ নেই। যারা এগুলো তৈরি করেছে, তারা কিন্তু সাধারণ মানুষের সেবার মানসিকতা নিয়েই তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে সেই টিকা এনে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।

ঢাকা পোস্ট : টিকা প্রয়োগে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কারও কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার কে নেবে?

মুশতাক হোসেন : সব টিকা কিন্তু ইমার্জেন্সি অথোরাইজড। এগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগে সম্মতি দেবেন যে, এতে যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে ব্যক্তি নিজেই দায়ী থাকবেন। টিকা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। টিকার পুরোপুরি লাইসেন্স পেতে অন্তত দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। সেক্ষেত্রে করোনা টিকাটার জরুরি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির দায় ব্যক্তিকেই নিতে হবে। যিনি টিকা নেবেন, তিনি এ বিষয়গুলো জেনেশুনেই নেবেন। 

সব টিকা কিন্তু ইমার্জেন্সি অথোরাইজড। এগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগে সম্মতি দেবেন যে, এতে যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে ব্যক্তি নিজেই দায়ী থাকবেন। টিকা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না

ডা. মুশতাক হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইইডিসিআর

তবে বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। কারও ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সরকার অবশ্যই চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারে, তবে এটার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে পারবেন না। কিন্তু যদি টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কাউকে বাধ্য করেন বা না জানিয়ে টিকা দিয়ে দেন, তাহলে অবশ্যই আপনি দায়ী থাকবেন।

ঢাকা পোস্ট : সরকার বলছে টিকা বিনামূল্যে দেবে, এটা কি ধনী-গরিব সবার জন্য প্রযোজ্য?

মুশতাক হোসেন : অবশ্যই সবাইকে বিনামূল্যে দিতে হবে। যাদের পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা আছে, তারা সরকারকে ট্যাক্স দেবেন। কিন্তু টিকা দেওয়ার সময় টাকা নেওয়া হলে সেখানে দুর্নীতি শুরু হয়ে যাবে।

ঢাকা পোস্ট : ফাইজারের টিকা নিয়ে কিছু বলুন…

মুশতাক হোসেন : ফাইজারের টিকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এ টিকা যে তাপমাত্রায় রাখতে হয়, সেই তাপমাত্রায় রাখার ব্যবস্থাপনা কিন্তু আমাদের দেশে নাই। এটা তো গণহারে দেয়ার বিষয়, অভ্যন্তরীণ হলে অন্য কথা ছিল। ফাইজারের টিকার বৈশিষ্ট্য হলো- এটার জেনেটিক কোড শরীরের ভেতরে ঢোকানোর জন্য চর্বি জাতীয় একটা আবরণ ব্যবহার করে। এখন এ চর্বির আবরণটা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গলে যাবে। এজন্য এটিকে অতিশীতল তাপমাত্রায় রাখতে হয় যাতে চর্বির আবরণটা যথাযথ থাকে। এটা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে ফাইজারের টিকা কতটুকু কার্যকর হবে?

মুশতাক হোসেন : ফাইজারের টিকা সব পরিবেশেই কার্যকর। ট্রায়ালে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর এটি। সুতরাং, আশা করা যায় বাংলাদেশেও এটি কার্যকর হবে।

ঢাকা পোস্ট : ফাইজারের টিকা নিয়ে কি সরকার ভাবতে পারে?

মুশতাক হোসেন : সরকারকে প্রথমে এ টিকা আনার ব্যাপারে অনুমোদন দিতে হবে। তবে বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটা আনার ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নিয়মগুলো অনুসরণ করে কেউ আনতে চাইলে অবশ্যই সে আনতে পারবে। তবে প্রথম ধাপে সরকার বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যে-ই আনুক, সরকার সেটা কিনে নেবে। কারণ প্রথম ধাপে যাদের দেওয়ার কথা, তাদের না দিয়ে খোলাবাজারে কোনো টিকা চালুর কোনো নীতি নাই। যারা আনবে, সরকার তাদের থেকে যথাযথ মূল্য দিয়ে কিনে নেবে।

টিআই/এমএসআর