আগে নিবন্ধনকারীরা পর্যায়ক্রমে পাবেন ফাইজারের টিকা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এই কেন্দ্রে প্রথম দফায় ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে এই টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। আগে যারা টিকা পেতে নিবন্ধন করেছিলেন, তারাই পর্যায়ক্রমে এ টিকা পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেও টিকা পাননি এমন ১১৫ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। আরও ৫ জনকে এসএমএস পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে যারা আসবেন সবাইকেই এই টিকা দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।
ফারুক আহমেদ বলেন, দেশে আজই (সোমবার) ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ শুরু হয়েছে। তবে এই কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুধু হচ্ছে। পরবর্তীতে যদি মনে হয় এই টিকা সেইফ, কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে ৭ থেকে ১০ দিন পরে বড় পরিসরে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। আগে যারা টিকা পেতে নিবন্ধন করেছিলেন, তারাই পর্যায়ক্রমে পাবেন।
এদিকে, হাসপাতালটিতে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার (কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রম। ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা গতকাল (রোববার) পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছি। আজ যেহেতু ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাই দ্বিতীয় ডোজ আজ বন্ধ রেখেছি। কাল যদি আবার ফাইজারের টিকা না দেই বা গ্যাপ থাকে, তাহলে আবার কোভিশিল্ডের টিকা দেওয়া শুরু করব। আপনারা জানেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সংকট রয়েছে। তবু গতকাল পর্যন্ত দিয়েছি।
অন্যকোনো কেন্দ্রে নিবন্ধন করে এখানে টিকা নেওয়ার সুযোগ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে শুধুমাত্র তাদেরই টিকা দেওয়া হবে, যারা ইতোপূর্বে এই কেন্দ্রে টিকা নিতে নিবন্ধন করেছিলেন। বাইরে থেকে এই কেন্দ্রে এসে টিকা নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না। আমাদের কাছে নিবন্ধনের তালিকা রয়েছে, সেই তালিকা দেখেই আমরা টিকা দিচ্ছি।
দেশে ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু, পাচ্ছেন ৩৬০ জন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল দশটায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট পরিচালক ফারুক আহমেদ টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ৯টায় ৪৯ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। একই সময়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ নিজ কেন্দ্র টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এর আগে রোববার (২০ জুন) স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখার জন্য ৭ থেকে ১০ দিন প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। টিকাদান কার্যক্রমের শুরু করার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একাধিক কর্মকর্তা এখানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
ফাইজারের টিকা নিতে পারবেন না যারা
যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা হিসেবে ‘ব্লাড প্লাজমা’ কিংবা ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ নিয়েছেন বা এখনও নিচ্ছেন তাদের করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া উচিত হবে না। যারা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন তাদের শারীরিক যেকোনো অস্বস্তির দিকে সতর্ক নজর থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোনো ‘অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন’ দেখা দিচ্ছে কি না। যেকোনো অস্বস্তি, তা যত সামান্যই হোক, চিকিৎসককে জানাতে হবে।
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যদি দেখা দেয় তবে শুরুতে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। জ্বর, অবসাদ, ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া কথা ইতোমধ্যেই জানা গেছে। আর এসবই হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার টিকার প্রতিক্রিয়া, যাতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্বের সব দেশে করোনার টিকা নিশ্চিতের প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের এই টিকা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এই টিকার দাম তুলনামূলক বেশি আর এর কার্যকারিতাও বেশি। এ কারণে এই টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে।
ফাইজারের ভ্যাকসিন সারাদেশে পরিবহন করার মতো কোল্ড চেইন সিস্টেম না থাকায় এগুলো মূলত রাজধানীতেই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফাইজারের ভ্যাকসিন অবশ্যই মাইনাস ৬০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
টিআই/এইচকে