প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। এই টিকা শুধু ঢাকা মহানগরীতেই দেওয়া হবে। পরিবহন ও সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে ফাইজারের টিকা ঢাকা মহানগরীতেই দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পরিবহন ও সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে ফাইজারের টিকা ঢাকা মহানগরীতেই দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর যে হাসপাতালগুলোতে এই টিকা দেওয়া হবে, সে হাসপাতালগুলোতে যারা আগে টিকা পেতে নিবন্ধন করেছিলেন এবং কোনো কারণে আগে গ্রহণ করতে পারেননি, তারা নিশ্চয়ই বিবেচনায় আসবে।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ ফাইজারের টিকা আমাদের কাছে থাকবে, নিশ্চয়ই সিরিয়াল অনুযায়ী প্রত্যেকেই সেটি পাবেন।

সংক্রমণ আবারও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসে প্রায় ৬০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই সুস্থতা অর্জন করেছেন। তবে এই রোগীদের মধ্য থেকে প্রায় ১৩ হাজার মানুষকে আমরা হারিয়েছি। আমাদের কাছে প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মুখপাত্র বলেন, সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু সেটা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গতমাসের শেষের দিকে সংক্রমণের হার ৯ দশমিক ৮ শতাংশে ছিল, এরপরে ৪ তারিখ থেকে সেটি ১০ শতাংশ, পরদিন ১১ শতাংশ এবং গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা ১২ শতাংশ দেখেছি। করোনা থেকে বাঁচতে আমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ফাইজারের টিকা তাপ ও আলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ টিকা কোনোভাবেই আলো ও তাপের সংস্পর্শে রাখা যাবে না। তাই রাজধানীর চারটি কেন্দ্রেই দেওয়া হবে এ টিকা। কেন্দ্রগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ফাইজারের টিকা শুধু ঢাকা শহরে দেওয়া হবে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে এ টিকা প্রয়োগের বিষয়ে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছে।

তিনি বলেন, যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন শেষ করেছেন এবং টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন, তারাই এ টিকা পাবেন। এছাড়া ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য যেসব ফ্রন্টলাইনাররা এখনও প্রথম ডোজ পাননি, তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ফাইজারের টিকা গর্ভবতী মা এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের দেওয়া যাবে না। এলার্জি প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস (অ্যানাফাউল্যাক্সিস) থাকলে সেসব ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া যাবে না। প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে যদি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তির শরীরে জ্বর থাকলে (৩৮.৫) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাহলেও টিকা দেওয়া যাবে না। এমনকি গ্রহীতার যদি কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ থাকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত টিকা দেওয়া যাবে না। এছাড়া অসুস্থ ও হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তিকেও এ টিকা দেওয়া যাবে না।

সোমবার (৩১ মে) রাতে ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা ঢাকায় এসেছে। এ টিকা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ তাপমাত্রার সংরক্ষণ পাত্র দেশে খুব কম আছে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচ), রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এ টিকা রাখার মতো উপযুক্ত পাত্র আছে।

টিআই/এসএসএইচ