কেনা টিকায় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা সম্ভব নয়
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অন্যান্য দেশ থেকে টিকা কিনে দেশের বৃহৎ সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান। তাই আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২) বাজেটে টিকা ক্রয়ের পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট, ইনিশিয়েটিভ ফর হেলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) ও ইউনিভার্সাল রিসার্চ কেয়ারের (ইউআরসি) যৌথ আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সায়েদুর রহমান বলেন, চলমান করোনা যুদ্ধে বর্তমানে উদ্ভাবিত টিকা কেবল ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে। আর এগুলো আমাদেরকে সর্বোচ্চ ছয় মাস থেকে এক বছর সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এভাবে প্রতিবছর টিকা ক্রয় করে এত বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যাকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, করোনা থেকে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা পেতে নিজেদেরই টিকা উৎপাদন ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি অর্থায়ন জরুরি। কিন্তু বাজেটে শুধু টিকা ক্রয়ের ব্যাপারেই বলা হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি টিকা উৎপাদনেও আমাদের বরাদ্দ রাখা জরুরি।
করোনা মোকাবিলায় বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাজেটে টিকা ক্রয়ের জন্য ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এক্ষেত্রে উদ্ভাবিত টিকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দামি হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এই টিকায় একজন মানুষকে দুই ডোজ দিতে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। সেক্ষেত্রে দেশের ১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বোচ্চ ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে। আর যদি অন্য কোনো টিকা ব্যবহার করতে যাই, তাহলে সেই খরচ আরও বাড়বে। কিন্তু বাজেটে এটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা বা ব্যবস্থাপনা নেই।
টিকা প্রয়োগে ধীরগতি ভাইরাসের জন্য সহায়ক
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, পৃথিবীজুড়েই টিকা আবিষ্কারের পরপরই দ্রুততম সময়ে মানুষকে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের প্রতিমাসে টিকা প্রয়োগ ৫০ লাখ ডোজ থেকে কমিয়ে ২৫ হাজার ডোজ করার কথা বলা হচ্ছে, এটা একদমই অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক। আমরা মনে করি এই স্লো ভ্যাক্সিনেশন (ধীরগতিতে টিকা প্রয়োগ) সংক্রমণ মোকাবিলায় ভূমিকা না রেখে বরং ভাইরাসের জন্য সহায়ক হবে। এতে করে ভাইরাস আরও শক্তি বৃদ্ধি করবে ও দ্রুত ধরন পরিবর্তন করবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি অন্যান্য দেশগুলোর দিকে দেখি, তাদের সবাই দ্রুত টিকা দেওয়ার মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের চেষ্টা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একদিনেই ৩২ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের প্রতি মাসে দুই কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়
টিকা প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন বাধ্যবাধকতাহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকি, তারা কখন কী নির্দেশনা দেয়। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। দেশে সংক্রমণ বিবেচনায় নিজেদের গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার অনুমোদন দানকারী কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, তারা শুধু জরুরি অবস্থা বিবেচনায় ব্যবহৃত টিকার তালিকা করে। ভারতসহ অসংখ্য দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত না হয়েও নিজের টিকা নিজেরাই ব্যবহার করছে।
তাই নিজেদেরকেই টিকা উৎপাদনের পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করেন বিএসএমএমইউয়ের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন প্রমুখ।
টিআই/ওএফ