ব্ল্যাক ফাঙ্গাস/ ছবি: সংগৃহীত

ভারতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়ানো ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা মিউকরমাইকোসিস (কালো ছত্রাক) এবার বাংলাদেশে ধরা পড়েছে। করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর চলতি মাসে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে অন্তত দুজনের শরীরে এই রোগটি শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে।

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানেন না বলে জানান। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসেনি। শনাক্ত হলেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। শিগগিরই রোগটির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা গাইডলাইন দেব।

আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে কালো ছত্রাক (ব্ল্যাক ফাঙ্গাস) যেন না আসতে পারে, সে বিষয়ে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এমনকি এই ছত্রাক দেশে এলে চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়েও আনুষ্ঠানিকভাবে সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, বিষয়টি নিয়ে কোভিড–১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেটি আছে, তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারাই একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা কথা বলেছি। আমরা বিভিন্ন জেলায় সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে কালো ছত্রাকের চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন আমরা দেব।

তিনি বলেন, কালো ছত্রাক নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা চাই এই কালো ছত্রাক যেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন করে চাপ হয়ে না দাঁড়ায়।

সংক্রমণ প্রতিরোধ-চিকিৎসায় প্রস্তুতির নির্দেশ

এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধ, ব্যবস্থাপনাসহ এই রোগের চিকিৎসায় সামগ্রিক বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলতে বিশেষ ধরনের অণুবীক্ষণিক ছত্রাকের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগকে বোঝায়। এই ছত্রাক সর্বব্যাপী- মাটি, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে থাকলেও সংক্রমণ ক্ষমতা এতই কম যে এক লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র এক-দুই জনের দেহে এই জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। কোনো কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই কেবল এই সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যেটা লাখে ২০ থেকে ৩০ জন হতে পারে।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, বিশেষত কিটো অ্যাসিডোসিস আক্রান্তরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। তাছাড়া ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, অতিরিক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, গর্ভবতী নারী, অত্যধিক স্টেরয়েড গ্রহণ করা, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে। চামড়ার গভীর ক্ষত ও পোড়া ঘায়েও এই রোগ হতে দেখা যায়।

ভারতের কোনো কোনো স্থানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

মিউকরমাইকোসিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা না করতে পারলে ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ রোগী মারা যায়। আর অভ্যন্তরীণ সংক্রমণের মৃত্যুর হার ১০০ শতাংশের কাছাকাছি, যোগ করেন বিএসএমএমইউ ভিসি।

টিআই/এসএসএইচ