দেশে প্রতিবছর অন্তত দুই হাজার করে চিকিৎসক নিয়োগ করা দরকার বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার। 

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি জেলা উপজেলা হাসপাতালেই প্রচুর চিকিৎসক প্রয়োজন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানুষ ঘুরে ঘুরেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। আমাদের যেহেতু ৪২তম বিসিএসের প্রায় ২ হাজারের মতো চিকিৎসক রেডি আছে, সরকারের উচিত তাদের থেকে সেই ঘাটতি পূরণ করা।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ৪২তম বিশেষ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. আব্দুল ওয়াহাব মিনার বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে সঠিক চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসকের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য মানুষ বিনা-চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভিটেমাটি বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দারস্থ হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের নিয়োগ প্রদান করা জরুরি।

তিনি বলেন, প্রতিবছর প্রয়োজনে নতুন বিসিএস থেকে আরো দুই হাজার জন করে চিকিৎসক নেওয়া যেতে পারে। দেশের জনসংখ্যা যেমন প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বিভিন্ন রোগবালাইও দিন দিন বাড়ছে। সে অনুযায়ী যদি আমাদের চিকিৎসক যুক্ত না হয়, তাহলে দিন দিন চিকিৎসা বৈষম্য বাড়তেই থাকবে।

বিশিষ্ট এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি। এই চিকিৎসকরা ও সেদিন আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। আমরা কেন আন্দোলন করেছি? আমরা চেয়েছি প্রতিটি সেক্টর থেকে বৈষম্য দূর হোক। তাহলে এখনও কেন বৈষম্য নিরসনে এই চিকিৎসকদের আন্দোলন করতে হয়? এখনও কেন মানুষকে রাস্তায় ঘুমাতে হবে? এখনও কেন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? এদিকে যাদের চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে অস্ত্রোপচারে ব্যস্ত থাকার কথা, তাদের কেন ন্যায্য দাবি আদায়ে প্রেস ক্লাবে আন্দোলন করতে হবে?

‘আমেরিকার প্রতি ১০০ জনে দুইজন ডাক্তার। আমাদের তো তাদের সঙ্গে তুলনা করে ডাক্তার বানালে হবে না। এত ডাক্তার দিয়ে আমাদের কী হবে যদি তারা মানসম্মত না হয়? এ বিষয়গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ভাবতে হবে এমনকি দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার করতে হবে।’

এ সময় ৪২তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন- ডা. মো. রেজওয়ান কবীর, ডা. ফাতেমা আক্তার এবং ডা. আশিক আহমেদ। 

তারা বলেন, ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ১ হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক আজও ক্যাডার পদে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এদিকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় চিকিৎসক সংকটের কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত আমাদের মতো প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের নিয়োগ প্রদান করা জরুরি।

তারা আরও বলেন, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শুধু নভেম্বর মাসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা পূর্বের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না। এদিকে সাধারণ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যোগদান পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি সময় প্রয়োজন। বর্তমানে ৪৪তম, ৪৫তম, এবং ৪৬তম বিসিএস প্রক্রিয়াধীন। ৪২তম বিসিএসের পরে আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। তাই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সংকট নিরসন সম্ভব।

টিআই/এমএ