বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় সাত হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি নিয়ে আমাদের নারীরা অবহেলা করেন। সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে এ রোগের চিকিৎসা নিতেও দেরি হয় অনেক। পাশাপাশি দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোথায় স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যাবেন, চিকিৎসা পদ্ধতি কী— এসব জানা না থাকাও রোগটির চিকিৎসায় বড় বাধা।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক এক সেমিনারের এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অডিটোরিয়ামে ‘আমরা নারী’ এবং ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা। আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট ড. মাহবুবা সুলতানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শফিউদ্দিন আহমেদ, আইটি কনসালটেন্ট মো. সামিউল ইসলাম হিরণ, ট্রেনিং ডিরেক্টর শহীদুল্লাহ স্বপন এবং আমরা নারী ও আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান (বিপ্লব)।

সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ‘আমরা নারী’ ও ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সচেতনতার বিষয়ে বলা হয়, নারীদের প্রাথমিক স্তরে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজে এই রোগ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করা এবং সঠিক তথ্য প্রচার করা। তরুণ প্রজন্ম ও কর্মজীবীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার ঘটানো। তাই সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে উপস্থিতদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

সেমিনারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ও লক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, স্তনে বা বগলে কোনো চাকা বা গোটার উপস্থিতি, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা অস্বাভাবিক ক্ষত পরিলক্ষিত হওয়া, স্তনের বা বোঁটার আকার পরিবর্তন, স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক রস বের হওয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা। ৪০ বছর বয়সের পর বছরে একবার ম্যামোগ্রাম করা। এই ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ সম্ভব।

‘আমরা নারী’র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি 

‘আমরা নারী’ একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যা নারীদের স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, কল্যাণ এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে। এর সহযোগী সংগঠন ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপদ খাদ্য এবং নারীর অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, এই সেমিনারের মাধ্যমে তরুণ সমাজের মধ্যে সচেতনতার বীজ বপন করা এবং একটি স্বাস্থ্য সচেতন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

এমএআর/