ঢামেকের দেয়ালে প্রতিবাদী ব্যানার-পোস্টার
ড্যাব নেতাদের ‘হাত ধরে’ ঢামেকে আওয়ামীপন্থিদের পদায়ন!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ড্যাব) কিছু নেতার হাত ধরে আওয়ামী সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বেশকিছু চিকিৎসকের পদায়ন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় হাসপাতালটিতে কর্মরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি ক্ষুব্ধ একদল চিকিৎসক ঢামেকের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে রাখতেও দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেলে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে আইএমও (রেসপিরেটরি মেডিসিন) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শামীম।
আরও পড়ুন
তিনি সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিলে অংশ নিয়ে পতিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ওই মিছিলটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে হয়েছিল, যেখানে একাধিক ছবি ও ভিডিওতে তার চেহারা চিহ্নিত রয়েছে বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীদের।
এরবাইরেও আওয়ামী লীগপন্থি ডা. মনিরুল ইসলাম নয়নকে (কে-৬৪) সিএ- সার্জারি, ডা. সাজিদ সোহেবকে (কে-৬৯) সহকারী রেজিস্টার (মেডিসিন), ডা. সাকিব আবরার (কে-৭২) আইএমও-মেডিসিন হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এদের তিনজনই সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ করতেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দের নামে সাঁটানো প্রতিবাদী ব্যানার-পোস্টারগুলোতে পদায়ন পাওয়া এসব চিকিৎসকদের ছবি যুক্ত করে এতে লেখে হয়েছে, এরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার বিচারকার্যে বাধাপ্রদানকারী ফ্যাসিস্ট ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বাচিপের দালাল। এদের পদায়ন বাতিল ও পদায়নের সঙ্গে জড়িতদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ।
বৈষম্যবিরোধী এসব চিকিৎসকদের দাবি, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে আওয়ামী লীগ ও স্বাচিপের রাজনীতিতে সক্রিয় চিকিৎসকদের পদায়নের পেছনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের ঢাকা মেডিকেল শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নোমান।
তারা বলেন, পদায়ন পাওয়ার পর ডাক্তারদের বিভিন্ন গ্রুপে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ স্বাচিপের এসব চিকিৎসকদের দেওয়া স্ট্যাটাসে ড্যাব ও বিএনপি নেতাদের প্রশংসা করেন।
অভিযুক্ত ডা. মাসুদ এক স্ট্যাটাসে লিখেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে গত রাতে আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে ট্রান্সফার অর্ডার হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার পর ধন্যবাদ জানাই আমাদের আশা বাতিঘর ড্যাবের ডা. রফিক ভাই (বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক) ও আমাদের ঢামেকসুর সাবেক জিএস নোমার ভাইকে (ড্যাবের ডিএমসি শাখার যুগ্ম সম্পাদক)।
এসব বিষয়ে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি স্বাচিপের হাতে নির্যাতিত মানুষ। তাদের কারণে জেল খাটতে হয়েছে। তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুসময়ে এসে অনেকে সুযোগ নিতে চায়। তবে আবার অনেকে ছিল, সরকারি চাকরি করে সরাসরি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা তাদের থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা পেয়েছি। তবে সরাসরি স্বাচিপ করে থাকলে তাদের আশ্রয়ের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের সবাই একই ছায়ার নিচে কাজ করি। কারো মাঝে কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবার পরামর্শ ক্রমেই কাজ করবো।
এদিকে ড্যাবের ঢামেক শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নোমান বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে বা আমার কান পর্যন্ত এসেছে, তাদের আমি চিনতামইনা। আমি গত ১৫ বছর ঢামেকে ঢুকতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর ১৫ আগস্ট আমার ঢামেকে অর্ডার হয়। এরপর এখানে আসি। এই স্বল্প সময়ে এত জুনিয়র লেভেলে আমার এক্সেস হয়নি। তারপরও বিভিন্ন ইস্যুতে এই ছেলেগুলো আমার কাছে এসেছে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে থাকা, সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে চলতে অনেকজনই কিছুটা তাল মিলিয়ে চলছে নিজেদের সেইফ রাখতে। কয়েকটা ছবি তুললেই তো তাদের অন্য দলেরই লোক এমন টা বলা যায়না।
বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের এই নেতা বলেন, ঢামেক ক্যাম্পাসে কয়েকটি গ্রুপ হয়েছে, আরপি-আরএস নিয়োগ নিয়েও সরাসরি স্বাচিপের লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই গ্রুপেরই ক্যাম্পাসে ব্যানার আছে। আমি কোনো গ্রুপিং চাই না। তবে আমরা অনেকবার বলছি স্বাচিপ করা কাউকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ না করাতে।
টিআই/এমএসএ