বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মানুষ কোনো না কোনোভাবে হাত-পা হারাচ্ছেন। হার্টের মত পায়েও ব্লক হয়, হাতেও ব্লক হয়। তবে কোনো কারণে হার্ট অথবা পায়ের রক্তনালী ৬ ঘণ্টার মত বন্ধ থাকলে এর মধ্যে যদি চিকিৎসা দেওয়া না হয় তাহলে ওই হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। অনেক মানুষ এই বিষয়টি জানেন না, ফলে নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত হাত অথবা পা হারাচ্ছেন অনেকে। 

বাংলাদেশে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় পতিত হলে একজন রোগীকে সেবার জন্য যে সমস্ত জরুরি চিকিৎসক প্রয়োজন হয় তার মধ্যে একজন হচ্ছেন ভাসকুলার সার্জন। কিন্তু বাংলাদেশে ভাসকুলার সার্জন এর সংখ্যা খুবই কম। সারাদেশে ভাসকুলার সার্জনদের পদ-পদবির সৃষ্টি না করায় বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জনদের কাজ করার সুযোগ নেই। ফলে সেসব স্থানে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই দেশের সব মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জন পদ সৃষ্টি এখন বড় দাবি।   

শনিবার (২ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় রক্তনালি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব ডা. সাকলায়েন রাসেল।  

বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির মহাসচিব ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোতে ভাসকুলার সার্জন নেই। সারাদেশে ভাসকুলার সার্জনদেরকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সারাদেশে সেবা প্রদান করার জন্য অনেক ভাসকুলার সার্জন আছেন। কিন্তু সরকারের কাছে পদ নেই। পদ না থাকার কারণ হলো, আমরা পদ সৃষ্টি করতে পারছি না। দেশের প্রত্যেকটা মেডিকেল কলেজে যদি ভাসকুলার সার্জনদেরকে পদায়ন করা যায় একজন রোগী দ্রুত গিয়ে সেখানে সেবা নিতে পারবেন। 

সরকারের কাছে আমরা আবেদন করতে চাই ভাসকুলার সার্জনের পদ সৃষ্টি করে আপনারা দ্রুত রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়া যতগুলো পঙ্গু হাসপাতাল রয়েছে আমরা সেখানে একজন করে ভাসকুলার সার্জনের পদায়ন নিশ্চিত করতে চাই।  

তিনি আরও বলেন, এশিয়া মহাদেশে এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস অন্যতম একটি মহামারি আকার ধারন করেছে, ডায়াবেটিসের জটিলতায়ও প্রতিনিয়ত আমরা হাত পা হারাচ্ছি। এর বাইরেও নানা কারণে হাত-পা হারানোর ঘটনা ঘটছে। আমেরিকার রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষ পা হারায়। এশিয়ায় নির্দিষ্ট কোনো জরিপ না করা হলেও আমরা ধরেই নিতে পারি এই হার তুলনামূলকভাবে আরো বেশি। 
এ অবস্থায় আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাই, তাদেরকে বলতে চাই আপনি ধূমপান থেকে দূরে থাকুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, হঠাৎ করে হাত পা ঠান্ডা হয়ে তীব্র ব্যথা হলে দ্রুত একজন ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নিন। পায়ে কোনো কারণে ঘা হলে, ইনফেকশন হলে সেটি যদি দ্রুত না সারে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নেবেন। একজন মানুষের পায়ে গ্যাংগ্রিন হলে, বা ঘা হলে সেই আঙ্গুলটি বা পাটি কেটে ফেলার আগে ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এমনকি হজ্জে যাওয়ার পূর্বেও একজন মানুষের পায়ের চেকাপ করাটা জরুরি। 

তিনি বলেন, একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ অবশ্যই প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর এবং একজন সাধারণ মানুষ ৩০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি বছর একবার করে তার পায়ের চেকাপ করাবেন। একজন মানুষের পা কেটে ফেললে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তার মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫০ ভাগ। কারো কারো ক্ষেত্রে এই হারটা আরো বেশি। এমতাবস্থায় আমাদের হাত এবং পায়ের সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের হাত এবং পাগুলো সুস্থ না থাকলে পুরো দেহ অচল হয়ে যেতে বাধ্য, এমনকি আমাদের জীবন ও বিপন্ন হয়ে যেতে বাধ্য। তাই আমরা স্লোগান নির্ধারণ করেছি আপনার হাত এবং পা কে রক্ষা করুন তাহলে আপনার জীবন বাঁচবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার, ডা. বজলুল করিম ভূঁইয়া প্রমুখ।

ওএফএ/এমএসএ