অপচিকিৎসার মাধ্যমে ডাক্তার নামধারী ভুয়া চিকিৎসকরা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট যদি ডাক্তার দাবি করেন, নার্সরাও যদি ডাক্তার দাবি করেন, তাহলে তো পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়বে।

শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী ২৭৩০/২০১৩ রিট নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করার প্রতিবাদে চিকিৎসক-জনতার প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন।

ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশন্স অব বাংলাদেশ (ইউমব) আয়োজিত সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, রোববার (৩ নভেম্বর) রিটের ৬৮তম শুনানি ধার্য করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই রিটের নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান বক্তারা। অন্যথায় এ দেশের সচেতন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনতা আদালত এবং সরকারের উপর আস্থা হারাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

তারা আরও জানান, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য পৃথিবীজুড়ে চিকিৎসকদের চিকিৎসা কর্মে সহায়তা করার জন্য অ্যালাইড হেলথ প্রফেশন রয়েছে, যেখানে নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মিডওয়াইফারিসহ নির্দিষ্ট কিছু জনশক্তি রয়েছে, যারা নির্দিষ্ট কর্ম বাস্তবায়ন করে থাকেন। প্রত্যেকের উচিত তার নিজস্ব অবস্থানের স্বকীয়তা বজায় রেখে নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়ন করা‌। 

বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৩ সালে ডিএমএফ ডিগ্রিধারী সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (স্যাকমো) কয়েকজন বিএমডিসি আইনকে অমান্য করে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করার জন্য আদালতে একটি অযৌক্তিক, আইন বিরোধী রিট দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল এই রিটের প্রথম শুনানি হয়, তারপর থেকে এক অদৃশ্য কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই রিটটি আদালতে ৬৭ বার কজ লিস্টে আসার পরও শুনানি হয়নি। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর এই রিটের ৬৭তম শুনানি ছিল। কিন্তু ওইদিনও রিটের শুনানি হয়নি। এভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে বারবার পেছানোর মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির মৌলিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা তাদের। 

তারা আরও বলেন, যারা ডাক্তার না তারা নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করে যাচ্ছেন। এর ফলে অবাধে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবাধে স্টেরয়েড নামক ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে- যা জনস্বাস্থ্যের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরকম নানাভাবে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে এই দেশের জনসাধারণ। যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ যখন রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে নিয়মতান্ত্রিক আর সুশৃঙ্খল করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, ঠিক এই সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার অন্যতম কারণ এই অচিকিৎসকদের চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা দেওয়া কখনোই কাম্য নয় বলে জানান বক্তারা। 

টিআই/জেডএস