স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু হানিফসহ অন্যান্যদের যোগদানকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। 

এসময় ড্যাবপন্থী চিকিৎসকদের হামলায় এনডিএফসহ সাধারণ কিছু চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহত চিকিৎসকরা হলেন—ডা. ইমরান, শাহরিয়ার ও যোবায়ের। 

সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকেই অধিদফতরের সামনে অবস্থান নেয় ড্যাবপন্থী চিকিৎসকরা। দুপুরের দিকে অধিদপ্তরে নতুন পরিচালকের যোগদান করতে যেতে চাইলে তাদের বাঁধা প্রদানের পাশাপাশি অবস্থানরত চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালক, লাইন ডাইরেক্টরসহ সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসকদের ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সকাল থেকেই গেটের সামনে মিছিল-সমাবেশ করে ড্যাবের চিকিৎসকরা। 

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ব্যানারে অধিদপ্তরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্যখাত সচল রাখতে বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজের পথ সুগম করার দাবি জানায় এনডিএফসহ অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসকরা। 

এসময় দুপক্ষ পরস্পর বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, এমনকি তা এক পর্যায়ে হাতাহাতি পর্যায়ে পৌঁছায়। এসময় ড্যাবের সমাবেশ থেকে একদল রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অন্য চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন আহত হন।

বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ব্যানারে আসা চিকিৎসকদের দাবি, ড্যাবের সঙ্গে থাকা বহিরাগত সন্ত্রাসীরা রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর, তার পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে।

আরিফুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক বলেন, নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা প্রদান করেন ড্যাবের চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তাদের যোগদানে বাধা প্রদান করেন। প্রকৃতপক্ষে নিয়োগপ্রাপ্তরা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের নন। নিজেদের স্বার্থে ড্যাব এসব চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামী সরকারের সময়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলা সংগঠনের নেতারা এখন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরমভাবে ‘চেয়ার দখলের যুদ্ধ’ শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। 

তারা বলছেন, আপাদমস্তক নিজেদের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের নিয়োগ মানতে পারছে না সংগঠনটি। স্বাস্থ্য প্রশাসনে একক ‘আধিপত্য’ বিস্তার করতেই তাদের এমন মনোভাব।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে বর্তমান নতুন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এতে পরিচালক পদে নিয়োগ পান ডা. আবু হানিফ। তাকে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দেয়। ডা. আবু হানিফ ২০ অক্টোবর যোগদান করতে এলে ড্যাবের চিকিৎসকরা বাধা প্রদান করেন। পরে তিনি সোমবার যোগদান করার জন্য অধিদপ্তরে আসেন। এসময় আবারও তাকে যোগদানে বাধা প্রদান করেন ড্যাবের চিকিৎসকরা।

টিআই/এমএসএ