সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা। তাই সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব হাসপাতালকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু রোগীর তুলনায় সরকারি হাসপাতালের শয্যা সীমিত থাকায় বাধ্য হয়ে অনেককে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সরকারি হাসপাতালের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

টেস্টের মূল্য কয়েকগুণ বেশি

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি টেস্ট হলো সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট)। রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণসহ অন্যান্য তথ্য জানতে এ টেস্ট করতে হয়।

সরকারি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একটি সিবিসি টেস্টের খরচ ১৫০ টাকা। একজন রোগী যদি এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকেন, তাহলে তার তিন থেকে চারবার সিবিসি টেস্ট করাতে হয়। যেখানে খরচ আসে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে একজন রোগীর ব্যয় হতে পারে দুই হাজার টাকার মতো।

অন্যদিকে, নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সিবিসি টেস্টে খরচ পড়ে গড়ে ৪০০ টাকার মতো। এর মধ্যে স্কয়ার হাসপাতালে ৪৫০ টাকা, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, বিআরবি হাসপাতাল ও ল্যাব এইডেও খরচ পড়ে ৪০০ টাকা।

সরকারি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একটি সিবিসি টেস্টের খরচ ১৫০ টাকা। অন্যদিকে, একই টেস্ট স্কয়ার হাসপাতালে ৪৫০ টাকা; গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, বিআরবি হাসপাতাল ও ল্যাব এইডে খরচ পড়ে ৪০০ টাকা

রোগীদের ভাষ্য, নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের ইচ্ছানুযায়ী টেস্টের বিল নির্ধারণ করছে। যেহেতু পরীক্ষাটি প্রায়ই করতে হয়, সেই বিবেচনায় এর খরচ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা উচিত।

গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন মো. কাওছার বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য কয়েকবার সিবিসি টেস্ট করতে হয়। যদি রোগীর অবস্থা জটিল থাকে, তাহলে ডাক্তার অন্য টেস্টও করতে দেন। কিন্তু এসব টেস্টের খরচের পরিমাণটা বেশি। এটা কিছুটা কম রাখলে প্রতিদিনের খরচের চাপ অনেকটা কমে যায়।

বিআরবি হাসপাতালে আসা রোগী স্বপন আহমেদ বলেন, টেস্টের মূল্য নেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোনো নিয়মনীতি নেই। ডেঙ্গু টেস্টের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা ৫০০ টাকা। অথচ কোনো কোনো হাসপাতালে হাজার টাকার ওপরে রাখা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সিবিসি টেস্টের যে খরচ, বেসরকারিতে তা কয়েকগুণ বেশি। এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

সিট ভাড়ায় দিশেহারা রোগী

ইবনে সিনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন। ভর্তি হওয়ার ছয় দিনের মধ্যে তার সংকট অনেকটা কেটে যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় হাসপাতালে বিলবাবদ তাকে দিতে হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিনের সিট ভাড়া ১৮০০ টাকার মতো। এ ছাড়া প্লাজমা দেওয়া হতো, ট্যাবলেট দেওয়া হতো। প্লাজমার দামই ছিল ৬০০ টাকা। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার টাকার মতো বিল আসে।

ইকবাল হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর লক্ষণ বুঝতে পারার পর প্রথমে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সিট পাইনি বলে এখানে এসেছি। সরকারিতে সিট পেলে তো আর এত টাকা খরচ হতো না। আমরা না হয় খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছি। যারা সামর্থ্যবান নন, আবার সরকারিতেও সিট পাবেন না, তারা কি করবেন?

ইবনে সিনা হাসপাতালের প্রতিদিনের সিট ভাড়া ১৮০০ টাকার মতো। ইবনে সিনার তুলনায় এক ধাপ উপরে রয়েছে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল। এখানে সিটবাবদ প্রতিদিনের খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ সাত হাজার টাকা। প্রায় সমপরিমাণ খরচ পড়ে বিআরবি হাসপাতালে। এখানে প্রতিদিনের সিট ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ সাত হাজার ৫০০ টাকা আর শেয়ার কেবিনের খরচ পাঁচ হাজার টাকা। অপরদিকে, স্কয়ার হাসপাতালে প্রতিদিনের সিট ভাড়া (ওয়ার্ড) চার হাজার ৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ ১০ হাজার টাকা, টুইন শেয়ার কেবিন ছয় হাজার ৫০০ টাকা

ইবনে সিনার তুলনায় এক ধাপ উপরে রয়েছে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল। এখানে সিটবাবদ প্রতিদিনের খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ সাত হাজার টাকা। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক খরচ তো আছেই।

প্রায় সমপরিমাণ খরচ পড়ে বিআরবি হাসপাতালে। এখানে প্রতিদিনের সিট ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ সাত হাজার ৫০০ টাকা আর শেয়ার কেবিনের খরচ পাঁচ হাজার টাকা।

অপরদিকে, স্কয়ার হাসপাতালে প্রতিদিনের সিট ভাড়া (ওয়ার্ড) চার হাজার ৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের খরচ ১০ হাজার টাকা, টুইন শেয়ার কেবিন ছয় হাজার ৫০০ টাকা।

ফলে এসব হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগী পাঁচ দিন ভর্তি থাকলে সিট ভাড়াবাবদই বেশ মোটা অঙ্কের বিল গুনতে হয়। এর বাইরে আরও রয়েছে ওষুধ, টেস্ট ও খাবারের বিল। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক দেখানোর ভিজিটও অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেন রোগীরা।

যদিও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বেসরকারি হাসপাতালের সেবা সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কয়েকগুণ ভালো। তাই খরচের পরিমাণটা সেভাবে ধার্য করা হয়।

কিন্তু রোগীরা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালের খরচের পরিমাণ কমিয়ে আনা হলে রোগীরা কিছুটা স্বস্তির সঙ্গে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।

জানতে চাইলে বিআরবি হাসপাতালে আসা রোগী তাহমিনা ইসলাম বলেন, আমরা চাই সরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে। কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে কারণে বেসরকারি হাসপাতালে আসতে হয়। কিন্তু এখানে খরচের পরিমাণটা অনেক বেশি। এটা যদি কিছুটা কম হতো তাহলে আমরা যারা সীমিত আয়ের মানুষ, তারা যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবাটা নিতে পারতাম।

ওএফএ/এসএসএইচ