স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৪
‘জটিলতায়’ ভরপুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া, আগে সংস্কার দাবি
সারা দেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে আইনের খসড়ায় নানা জটিলতা রয়েছে উল্লেখ করে বর্তমান বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পর সুরক্ষা আইন প্রণয়নে হাত দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্ম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ’ নিয়ে পর্যালোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সভায় ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ খসড়া আইনে উল্লিখিত ধারার বিশদ ভুল ও অস্পষ্টতা তুলে ধরেন। এ আইনের নানা দুর্বলতা ও সমাধানে করণীয় উঠে আসে তার আলোচনায়।
সভায় আলোচকরা বলেন, এ আইন লেখার আগে গবেষণা করা হয়নি। নানা সেক্টরের আলোচনায় উঠে আসা বক্তব্য ও প্রস্তাবগুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ খসড়া পূর্ণাঙ্গ নয়। এটাকে রিভিউ করে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এ ছাড়া আইনে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। হাসপাতালের সংজ্ঞায় বিভ্রান্তি রয়েছে, যা কোনোভাবে কাম্য না।
আরও পড়ুন
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, খসড়া প্রস্তাবনায় বহু ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়নি। এটি বাস্তবায়ন হলে তা আইন করা প্রয়োজন তাই করা হবে। এতে চিকিৎসক ও রোগী কোনো পক্ষই উপকৃত হবে না।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষার নামে সবগুলো আইনেই কেবল চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। রোগীর সুরক্ষার কথা সবগুলো আইনে নেই। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আদালত সরাসরি আমলে নেবে না। চিকিৎসকদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের পাঠানো রিপোর্ট পেলে আইন অনুযায়ী আদালত তখন তা আমলে নেবে কি না তা দেখবে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার পাশাপাশি রোগীদেরও সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
শিশির মনির আরও বলেন, ২০১০ সালে বিএমডিসিতে আইন হয়। আইনে মেডিকেল নেল্গেজেন্সি হলে চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করা, সামান্য শাস্তি দেওয়া, এর বাইরে আইনে কিছুই করার নেই। কিন্তু ভারতের ভোক্তা অধিকার আইনে রোগী ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে। রোগীর ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেজন্য আদালতের বাইরে মেডিয়েশন ও আব্রিট্রেশন সুযোগ রাখা উচিত।
চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, আমরা যে খসড়া নিয়ে আলোচনা করছি তা স্বৈরাচারের আমলে তৈরি করা। আমি এখানে অন্তত ৪০টি ভুল ও হাস্যকর বিষয় দেখাতে পারব। যারা এটি করেছেন, তারা কোনো গবেষণা করেননি। এটি একটি আবর্জনা। এটি নিয়ে আলোচনা করা মানে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করা।
হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বী বলেন, এখানে কাউকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। এটি একটি দায়সারা কাজ। এখানে মোবাইল কোর্টের বিষয়টি আনা হয়েছে, যা যুক্তিযুক্ত নয়। এ ছাড়া অসংখ্য অসংগতি রয়েছে। যা গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে।
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য প্রশাসন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, আইনজ্ঞ, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন।
টিআই/এসএসএইচ