আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে চিকিৎসক সমাজ সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, গত দিনগুলোতে যারাই দুঃশাসনের পদলেহন করেছে, যোগ্যতা-দক্ষতা না থাকলেও তারাই প্রমোশন পেয়েছে, স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে জেঁকে বসেছে। আর ভালো চিকিৎসকরা গত ২০ বছরে মেডিকেল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপকও হতে পারেননি।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিএসএমএমইউর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) আয়োজিত চিকিৎসক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, চিকিৎসক সমাজ যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামেই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। গত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও এনডিএফের চিকিৎসকরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের চিকিৎসকরা একইসঙ্গে মাঠেও লড়েছেন, আবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হওয়া ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কারণে তাদেরকে বদলি করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরপরও এনডিএফের চিকিৎসকরা পিছ পা হয়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের সময়ে চিকিৎসকরা বরাবরই অবহেলিত ছিল। শুধুমাত্র বিএনপি-জামায়াতপন্থি হওয়ার কারণে অসংখ্য চিকিৎসককে গত ১৫-২০ বছরেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। একজন মেডিকেল অফিসার ২০ বছরেও সহকারী অধ্যাপক হতে পারেননি, এর চেয়ে বৈষম্য আর কি হতে পারে? এক্ষেত্রে যেহেতু ছাত্র-জনতা একটি নতুন স্বাধীনতা এনেছে, আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই যেন গত সরকারের বঞ্চনার শিকার হওয়াদের অবিলম্বে পদোন্নতি দিতে হবে। এক্ষেত্রে এনডিএফকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চিকিৎসক সোসাইটিকে পরিবর্তনে এনডিএফের চিকিৎসকদের অনেক কিছু করার আছে। আপনারা সাধারণ চিকিৎসকদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবেন এবং সমাধানের চেষ্টা করবেন। তবে আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা ডাক্তার হই আর শ্রমিক হই, দিনশেষে আল্লাহর বান্দা। আমাদের সব কর্মকাণ্ডের জন্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।

নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, গত সরকারের সময়ে আমরা অনেক বেশি নির্যাতিত ছিলাম। আমাদের এনডিএফের চিকিৎসকরা কোনো ধরনের কাজের সুযোগ পাননি। সেই সময়ে আমরা যারা ঈমানের দাবি পূরণ করতে পারিনি, আগামী দিনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি, সেটাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।

গণহত্যায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু যারাই হাজারও ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলো, তারা এখনও বিচারের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করছে এবং আবারও স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তেমন কোন ভূমিকা দেখছি না বলে মেনে নিতে পারছি না। যারাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণহত্যায় জড়িত ছিল, তাকে সহযোগিতা করেছিল, প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে।

টিআই/জেডএস