ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর– এই সতর্কবাণী পড়ার পরও এতে বুঁদ হয়ে আছে মানুষ। উল্টো দিনের পর দিন ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। আর আশ্চর্যজনকভাবে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মধ্যেও ধূমপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর নারীদের মধ্যে স্মোকিংয়ের বাড়বাড়ন্ত দেখেই চিন্তায় পড়ে গেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নিয়মিত ধূমপান করলে শুধু যে ফুসফুস, হার্টের ক্ষতি হবে তা নয়, এর পাশাপাশি ফার্টিলিটির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি পিছু নিতে পারে বন্ধ্যাত্বের মতো বিরাট সমস্যা।

নষ্ট হয়ে যেতে পারে ডিম্বাণু​

চিকিৎসকরা বলছেন, নানা কারণে নারীদের মধ্যে ধূমপান বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফার্টিলিটির ওপর। আসলে সিগারেটের ধোঁয়ায় মজুত রয়েছে অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক। আর এসব রাসায়নিক ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যের হাল বিগড়ে দিতে পারে। অকালে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ডিম্বাণু। যার ফলে গর্ভধারণে হতে পারে সমস্যা। মাতৃত্বের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যেতে পারে। তাই চেষ্টা করুন যেভাবেই হোক ধূমপানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার।

ফ্যালোপিয়ান টিউবে হতে পারে সমস্যা​

ধূমপানের প্রভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউবের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যার ফলে কনসিভ করার সময় বিপদে পড়তে হয়। এছাড়া, অনেক সময় ধূমপায়ী নারীদের ভ্রূণ গর্ভাশয়ের বদলে ফ্যালোপিয়ান টিউবেই জন্ম নেয়। এই সমস্যার নাম হলো এটোপিক প্রেগনেন্সি। আর একবার এই ধরনের প্রেগনেন্সি এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নইলে স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে পারে। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে অবশ্যই ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করতে হবে।

শুধু বন্ধ্যাত্ব নয়, এর পাশাপাশি নিয়মিত ধূমপান করলে বিপদে ফেলতে পারে মুখ, গলা ও ফুসফুসের ক্যানসার। এর পাশাপাশি হার্টের প্রাণঘাতী সব অসুখের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডিও হতে পারে সঙ্গী।

এখানেই শেষ নয়, ধূমপানের কারণে বাড়ে দুশ্চিন্তা। এর পাশাপাশি প্রেশারও হতে পারে ঊর্ধ্বমুখী। তাই চেষ্টা করুন আজ শেষবারের মতো সিগারেটে টান দেওয়ার। তারপর এই বদভ্যাসে ইতি টানুন।

চিকিৎসকরা বলছেন, একজন নারী যদি মাত্র ৯০ দিন সিগারেটের থেকে দূরে থাকতে পারেন, তাহলে তার ডিম্বাণুর মান অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। এরপর সহজেই আসে প্রেগনেন্সি। এমনকি একাধিক জটিল অসুখে পড়ার আশঙ্কাও কমে।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে এতটাই ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায় যে শুধু সিগারেট ছেড়ে লাভ মেলে না। এর পাশাপাশি চিকিৎসার প্রয়োজনও পড়ে। তাই ধূমপানে ইতি টানার পরও যদি প্রেগনেন্সি না আসে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নইলে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ দিকে এগিয়ে যাবে।

নিজের সঙ্গে কথা বলুন​

সিগারেট ছাড়তে চাইলে সবার প্রথমে নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আপনি কেন সিগারেট ছাড়তে চাইছেন তা এক জায়গায় লিখে রাখুন। এছাড়া, ধূমপান ছাড়লে আপনি কী কী উপকার পাবেন, তাও লিখে রাখা জরুরি। তাহলেই দেখবেন সিগারেট ছাড়ার কাজে কিছুটা হলেও এগিয়ে যাবেন। পারলে বিষয়টি নিয়ে নিজের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলুন। তাহলে তারাও আপনাকে ধূমপান ছাড়ায় সহযোগিতা করবেন। 

অনেক সময় খুব চেষ্টা করার পরও এই কাজে সাফল্য মেলে না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি যা পরামর্শ দেবেন, তা মেনে চলুন। আশা করছি, তাহলেই ধূমপানের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

কেএ