করোনা মহামারির সময়ে যে পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছিল এর ভ্যাকসিন, ওই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবার ক্যান্সারের ‘পার্সোনালাইজড ভ্যাকসিন’ বা প্রতিষেধক তৈরির আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। মানবদেহে ইতোমধ্যে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগও হয়েছে।  

ব্রিটেনের ৩০টি হাসপাতালে ক্যান্সার ভ্যাকসিন লঞ্চ প্যাডের হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন হাজারেরও বেশি রোগী। 

সাধারণভাবে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক বলতে বোঝায় রোগপ্রতিরোধকারী ব্যবস্থা, কোনো রোগ হওয়ার আগেই ওষুধটি প্রয়োগ করে সংক্রমণ ঠেকানো। তবে ক্যান্সারের ভ্যাকসিনটি অবশ্য ভিন্ন ধরনের। রোগীর ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে এটি দেওয়া হবে। কাজ সে অন্য প্রতিষেধকের মতোই করবে। শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সজাগ করবে ওই টিকা। শরীরে খুঁজে বের করবে শত্রুকে (অর্থাৎ ক্যান্সারকে) এবং তার পর ধ্বংস করবে। 

এই টিকার ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ইলিয়ট ফিব নামে এক রোগী বলেন, আমি নিজেও এই ট্রায়াল নিয়ে পড়াশোনা করেছি। প্রতিষেধকটি যদি সফল হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। 

ইলিয়টের ক্ষেত্রে তার টিউমারের নমুনা জার্মানিতে বায়োএনটেক-এর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ে ইলিয়টের ক্যান্সার কোষে ২০টি মিউটেশন ধরা পড়ে। এর ওপর ভিত্তি করে এমআরএনএ-র সিকোয়েন্স তৈরি করা হয়, যা পরে ভ্যাকসিন হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া টিকাকেই ‘পার্সোনালাইজড ভ্যাকসিন’ বলা হচ্ছে।   

ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের কুইন এলিজাবেথ হসপিটালে ট্রায়ালের প্রধান বিশেষজ্ঞ ভিক্টোরিয়া কুনেন বলেন, এই চিকিৎসা ব্যবস্থার পিছনে যে বিজ্ঞান রয়েছে, তা যথেষ্ট অর্থপূর্ণ। নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে। ভবিষ্যতে ক্যান্সার রোধে এটিই আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি হবে। 

তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন যে,  এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ব্রিটেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন ও সুইডেনেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। ক্যান্সারের পার্সোনালাইজড ভ্যাকসিনের ১৫টি ডোজ পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে অংশগ্রহণকারী রোগীদের। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ২০২৭ সালের আগে এই গবেষণা সম্পূর্ণ হবে না। তবু এই ট্রায়াল নিয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞেরা।

এনএফ