অভিভাবকরা প্রায়ই শিশুদের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অযথাই তাদের প্রতিযোগিতার দৌড়ে নামিয়ে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, অভিভাবকরা অযথা চাপ প্রয়োগে শিশুদের মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এ রকম চর্চা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য বাবা-মাসহ অভিভাবকদের শিশুদের প্রতি সহনীয় আচরণ করতে হবে।

শনিবার (২৯ জুন) গণমাধ্যম ও যোগাযোগ উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শিশুদের সুস্থ-স্বাভাবিক-পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ জরুরি হলেও এটি সব মহলে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এজন্য নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগ ও কর্মসূচি দরকার। শহরের পাশাপাশি গ্রামের শিশুদের জন্য এরকম কর্মসূচি প্রয়োজন।

এ সময় তিনি যেকোনো সমস্যায় শিশুদের অযথা চাপ প্রয়োগ না করে সমস্যা সমাধানে বাবা-মায়েদের সহনশীল আচরণের পরামর্শও দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিউম্যানিটি বিয়ন্ড ব্যারিয়ার্সের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।

এ সময় শিশুর সুরক্ষায় অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন আলোচকরা। তবে পারিবারিকভাবে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি স্কুল কলেজ থেকেও মানসিক স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ জরুরি বলেও আলোচনায় ওঠে আসে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন বলেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে সরকারিভাবে একটি জাতীয় রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ এর বরাতে সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ (২৮ মিলিয়নের বেশি) হালকা থেকে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে।

এই সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ শিশুর মানসিক অসুস্থতা রয়েছে। এর মাঝে ৯৫ শতাংশই কোনো ধরনের পরামর্শ বা চিকিৎসার আওতায় আসে না। অভিভাবকরা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে চিহ্নিতও করতে পারেন না। এ অবস্থা সমস্যাটিকে আরও প্রকট করে তোলে।

শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, বরগুনা ও টাঙ্গাইলের ১০টি স্কুলের ৪০০ জন অভিভাবককে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাক্ষরতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

টিআই/এসকেডি