বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন করা হয় ১৪ জুন। এই দিনে সারা বিশ্বেই রক্তদাতাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানানো হয়। অন্যের প্রাণ বাঁচাতে বহু সহৃদয় ব্যক্তি নিয়মিত রক্ত দিয়ে থাকেন। তাদের জন্যই উৎসর্গ এই একটি দিন।

তবে রক্তদানের জন্য বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সবাই চাইলে রক্তদান করতে পারেন না। রক্তদানের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। এই নিয়মগুলি স্বাস্থ্যসম্পর্কিত নানা নিয়ম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এই নিয়মগুলো নির্ধারিত করা হয়েছে। কী কী নিয়ম রয়েছে রক্তদানের ক্ষেত্রে? জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

রক্তদান করার জন্য কিছু জরুরি নিয়ম

বয়স : বয়স ১৮ থেকে ৬৫ সালের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশ্বের কিছু দেশে ১৬-১৭ বছর বয়স থেকেই রক্ত দেওয়া যায় যদি শরীর ও রক্তসংবহন তন্ত্র পরিণত হয়। আবার যারা নিয়মিত রক্ত দেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ৬৫ বছরের পরেও রক্ত দেন। তবে আদর্শ বয়স ১৮-৬৫ বছর।

ওজন : ওজন অন্ততপক্ষে ৫০ কেজি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিছু কিছু দেশে ৪৫ কেজি ওজন হলেও রক্তদান করতে পারেন একজন। কিন্তু সেক্ষেত্রে কমবেশি ৩৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা যায়।

স্বাস্থ্য : রক্তদানের সময় স্বাস্থ্য ভালো থাকা জরুরি। এই সময় ঠান্ডা, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, পেটে ব্যথার মতো সংক্রমণে ভুগলে চলবে না। গায়ে ট্যাটু করালে বা কানের দুল, নাকের নথ পরার ছিদ্র করলে অন্তত ছয় মাস রক্তদান করা যাবে না। কোনো চিকিৎসকের কাছ থেকে এই ছিদ্র করালে ১২ ঘণ্টা অন্তত অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া দাঁতের চিকিৎসকের কাছে ছোটখাটো চিকিৎসা করাতে গেলেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। রক্তের হিমোগ্লোবিন লেভেল পর্যাপ্ত না থাকলে রক্তদান করা ঠিক নয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন মাত্রা মহিলাদের ১২ ও পুরুষদের ১৩ নম্বর থাকতে হবে অন্তত।

সংক্রমণপূর্ণ স্থানে ভ্রমণ করলে : ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, জিকা ভাইরাসসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি। সেসব এলাকায় ভ্রমণ করলে রক্তদান করা নিষিদ্ধ সাময়িককালের জন্য। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ যৌনতা করলে, এইচআইভি টেস্ট পজিটিভ এলে, ড্রাগের নেশা করলে রক্তদান করা যাবে না। পাশাপাশি গর্ভাবস্থা ও সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় রক্তদান না করাই নিরাপদ।

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের ইতিহাস

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন করা হয় কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মবার্ষিকীতে। এই বিখ্যাত গবেষক আধুনিক ব্লাড ট্রানফিউশনের জন্মদাতা। তাকে বলা হয় ‘ফাদার অব মডার্ন ব্লাড ট্রানসফিউশন’। প্রসঙ্গত কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার একজন অস্ট্রিয়ান বায়োলজিস্ট অর্থাৎ প্রাণিবিদ। একই সঙ্গে তিনি চিকিৎসকও ছিলেন। ১৮৬৮ সালে জন্মের পর ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। এর পর ঢুকে পড়েন ডাক্তারি পেশায়। সেখানে থাকতে থাকতেই আধুনিক ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্তদান পদ্ধতির জন্ম দেন তিনি। 

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের শুরু কীভাবে 

২০০৪ সাল থেকে এই দিনটির আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংস্থা ছিল এই উদ্যোগের পেছনে। মূলত চারটি সংগঠনের উদ্যোগেই শুরু হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন। এর মধ্যে ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অরগ্যানাইজেশন ও ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশন। ২০০৫ সালে এই চার সংস্থার উদ্যোগে প্রথম একটি গ্লোবাল ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। ৫৮তম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সময় এই বিশেষ ইভেন্টটি হয়েছিল।

রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার 

রক্তদানের জন্য রক্তের গ্রুপ খুব জরুরি। তা না হলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর এই রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেছিলেন কার্ল। ১৯০১ সালে এবিও রক্তের গ্রুপের বিভিন্ন ভাগ আবিষ্কার করেন তিনি।

এসএম