বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে নিয়মিত ডেঙ্গু রোগীর তথ্য না দিলে পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ঠিকমতো তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছে না। কোভিডের সময় অনেকে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট আমাদের দেননি, ডেঙ্গুতেও এমনটা হচ্ছে। কিন্তু এমন হতে থাকলে আমরা পরীক্ষা অনুমোদন বাতিল করে দিব।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বিতে স্ত্রেন্দেনিং টিউবারকিউলোসিস পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স ফর অ্যানহ্যান্সড পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বেসরকারি তথ্যগুলো আমাদের কাছে যথাযথভাবে না আসার কারণে সমস্যাগুলো ডিটেক্টেড হচ্ছে না, এমনকি ডিটেক্টেড না হওয়ায় রিপোর্টেডও হচ্ছে না। কিন্তু সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী যে কোনো সংক্রামক রোগ শনাক্ত হলে সরকারকে অবশ্যই জানাতে হবে। কিন্তু এটা ঠিকমতো জানানো হচ্ছে না। এমনটা হতে থাকলে আমরা আর টেস্টের অনুমোদন দেব না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আমাদেরকে এই বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে বলেছেন।

তিনি বলেন, এখনো ৩১ শতাংশের বেশি মানুষ যক্ষ্মা শনাক্তের বাইরে, এটি খুবই আশঙ্কাজনক। উচ্চবিত্ত শ্রেণি সর্দিকাশিতে হাসপাতালে যায়, কিন্তু নিম্নবিত্ত শ্রেণি সবসময় কাশি হলেই ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে ফেলে। অথচ ওইসব রোগীদের যক্ষ্মা হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ফার্মেসিগুলোতে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এজন্য ওষুধের দোকানগুলোকে কীভাবে আওতায় আনা যায়, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এই সেক্টরটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চিকিৎসকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটা আক্ষেপ আছে। তিনি সবসময় বলেন চিকিৎসকরা গবেষণা করেন না। কিন্তু আইসিডিডিআর,বি তো একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, তাহলে আইসিডিডিআর,বি কেন গবেষণায় এগিয়ে আসতে পারছে না?

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি ২০৩০ সালের মধ্যে টিবির টার্গেট এচিভ করতে পারব। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে মূল সমস্যাটা আগে শনাক্ত করতে হবে। অনেকগুলো জায়গায় সরকার পৌঁছাতে পারছে না, সেগুলোতে প্রাইভেট সেক্টরকে দরকার। যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। সরকারের জন্য টিবিই একমাত্র সমস্যা নয়। নিয়মিত নানা সমস্যা আসছে, কোভিড নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ডেঙ্গু চলে এসেছে। এজন্য বেসরকারি সেক্টরকেও সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, সারা দেশে চার লাখের মতো যক্ষ্মা রোগী আছে, যাদের মধ্যে আবার ১০ হাজারের মতো রোগী আছে, যাদের ড্রাগ রেজিস্টেন্স। তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ৬৯ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হলেও আরও প্রায় ৩১ শতাংশ রোগীই শনাক্তের বাইরে থেকে যায়, যা অন্যান্য সাধারণ মানুষের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেলখানাগুলোতে অনেক লোক, সেখানে জায়গার সংকুলান কম। এসব জায়গায় যক্ষ্মার ট্রান্সমিশন খুবই সহজ। আইসিডিডিআর,বি জেলখানায় কাজ করছে। সহজভাবে তাদেরকে কীভাবে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি কাজ করছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের কাজগুলোতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

টিআই/এমজে