দেশে দিনদিন এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের প্রণীত ‘ন্যাশনাল স্ট্রাটেজক প্ল্যান তথা জাতীয় কৌশল পরিকল্পনা’ অনুযায়ী সব পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নাহলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (২৬ মে) মহাখালীতে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) আয়োজিত ‘ম্যানেজমেন্ট অব এডিস মসকুইটো : হলিস্টিক পাবলিক হেলথ অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক সায়েন্টিফিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নিপসমের এন্টোমোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার। মূল প্রবন্ধে তিনি সাম্প্রতিক ডেঙ্গু ভয়াবহতায় এর বাহক এডিস মশা দমনে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা সবিস্তারে আলোকপাত করেন।

উপস্থাপনায় তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব ধরনের পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সাম্প্রতিক প্রণীত ন্যাশনাল স্ট্রাটেজক প্ল্যান অনুযায়ী সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের এই সংকট মোকাবেলা সহজ হবে। একইসঙ্গে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, লার্ভিসাইড এবং অ্যাডাল্টিসাইডের যৌক্তিক প্রয়োগ গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করতে হবে। লার্ভিভোরাস ফিশ, ড্রাগনফ্লাই নিম্ফ, ব্যাঙ ইত্যাদির মতো মশার শত্রুদের সংরক্ষণ করতে হবে। ভেক্টর, এজেন্ট এবং হোস্টের ওপর গবেষণা পরিচালনা করার জন্য উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও মেডিকেল এনটোমোলজি বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করে চিকিৎসা শিক্ষাকে শক্তিশালী করা অতি জরুরি।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্তরে মেডিকেল এন্টোমোলজিস্টদের নির্দিষ্ট কাঠামোগত অর্গানোগ্রাম নিশ্চিত করে নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে এডিস মশা নিয়ে সামগ্রিক গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে এবং দ্রুতই ন্যাশনাল স্ট্রাটেজক প্ল্যান ২০২৪-২০৩০ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া। তিনি বলেন, মশা জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে দায়ী জিনকে এলিমিনেট বা সাপ্রেস করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। এবিষয়ে উচ্চতর গবেষণাগার প্রয়োজন। আর নিপসম হতে পারে এই উচ্চতর প্রযুক্তি নির্ভর গবেষণারের সেন্টারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে মশার ঘনত্ব সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। এতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে সাংবাদিকেরা বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি অনুপমা হাজারিকা বলেন, এডিস ইজিপ্টাই কোথায় থাকে, আমরা জানি। কিন্তু এডিস অ্যালবোপিকটাস সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মানুষের সচেতনতা বাড়াতে জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রিক পন্থা ব্যবহার করতে হবে, মশা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষ, নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যুক্ততা আরও বাড়াতে হবে, অন্য দেশের সফল অভিজ্ঞতা দেশে জুতসইভাবে প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে সেমিনারের সভাপতি ও নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম বলেন, এডিশ অ্যালবোপিকটাস বিষয়ে গবেষণা এবং এডিশ মশার স্বভাব পরিবর্তনের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উদ্যোগ নিয়েছে নিপসম। সকল সুপারিশের ভিত্তিতে প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে নিপসমসহ সিডিসি এবং ডিজি হেলথ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই একসাথে কাজ করব।

এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নিপসমের রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক শেখ দাউদ আদনান ও বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন প্রধান বক্তব্য দেন।

টিআই/পিএইচ