ডিএনসিসির করোনা হাসপাতাল
আইসিইউর খোঁজে স্বজনদের ভিড়
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন বৃদ্ধা রোকসানা বেগম। শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। রোকসানা বেগমকে আইসিইউতে ভর্তির জন্য ডিএনসিসির করোনা হাসপাতালে খোঁজ নেন তার ছেলে নাজমুল হুসাইন। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। সবগুলো আইসিইউ বেডে রোগী। এ মুহূর্তে কোনো রোগী সুস্থ কিংবা মারা গেলে তবেই একটি আইসিইউ বেড জুটবে রোকসানার ভাগ্যে।
শুধু নাজমুল হুসাইনই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে আইসিইউয়ের খোঁজে ভিড় করেছেন অসংখ্য রোগীর স্বজন। কিন্তু বেড খালি না থাকায় নিরাশ হতে হচ্ছে তাদের।
বিজ্ঞাপন
নাজমুল হুসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে আমার মা কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে, শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে মাত্র ১০টা আইসিইউ বেড। সেগুলোর একটিও ফাঁকা নেই। এই অবস্থায় কোথায় গেলে মায়ের জন্য আইসিইউ বেড পাবো খুঁজতে বের হয়ে এখানে এসেছি। এখানেও জানিয়ে দিল আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই। এখন কী করবো, কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন হাবিবুর রহমান নামে এক রোগী। নিয়মিত অক্সিজেন দিতে হচ্ছে তাকে। এ অবস্থায় তার ছোট ছেলে রিজভী রহমান এসেছেন ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে। কথা হয় রিজভী রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করানো হয়েছে সেখানে এমনি চিকিৎসা চলছিল কিন্তু হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। তাই নিয়মিত অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এখন চিকিৎসক বলছেন, অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত আইসিইউতে নিতে হবে। যেহেতু বেসরকারিতে আইসিইউ বেডের খরচ প্রচুর তাই ডিএনসিসির করোনা হাসপাতালে খোঁজ নিতে এসেছি। কিন্তু তারাও জানালো এই মুহূর্তে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই, তবে আমরা চাইলে জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে পারবো। তাই ফিরে যাচ্ছি।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, করোনার উপসর্গ বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে যেসব রোগী এখানে ভর্তির জন্য আসছেন তারা সরাসরি ভর্তি হতে পারছেন। তবে এই মুহূর্তে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই। তাই বাইরে থেকে আসা কাউকে সরাসরি আইসিইউতে ভর্তি করানোর মতো অবস্থা নেই।
এদিকে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকে অব্যাহতভাবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গতকাল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রথম পাঁচদিনে ১৭৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটিতে। এসব রোগীর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৯৮ জন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন শুক্রবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখানে ১০০টি আইসিইউ বেড আছে। এর মধ্যে ৯৮ টিতেই রোগী আছেন। এছাড়াও ২০০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে এগুলো চালু করা যাচ্ছে না। জনবল নিয়োগের পরে বাকিগুলো চালু করতে হবে। এজন্য কিছুদিন সময় লাগবে। হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকে রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের রোগীরাও এখানে আসছেন। আমরাও বাইরের জেলা থেকে আসা রোগীদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। যারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার হয়ে আসছেন, তাদের নিরুৎসাহিত করছি।
এএসএস/এসকেডি