ঢামেকে নেই অ্যাম্বুলেন্সের সারি, কমেছে রোগী
মহামারি করোনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। টানা চারদিন মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে হঠাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা নিম্নমুখী। রোগীর চাপ কমায় দেখা যাচ্ছে না আগের মতো অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘ সারি।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) ঢামেকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে এবং সেখানে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হকও ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে সংক্রমণের হার কমছে। হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপও কমছে। আজও (সোমবার) একশ’র বেশি শয্যা ফাঁকা আছে। গতকালও (রোববার) একই চিত্র দেখা গেছে। মূলত, সংক্রমণের হার কমায় রোগীর চাপ কমছে। হাসপাতালের সামনে আগের মতো অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘ সারিও চোখে পড়ছে না।
মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালু হওয়ায় ঢামেকে চাপ কমেছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য আমার জানা নেই। তবে আমাদের এখানে রোগী এলে আমরা ফেরত পাঠাচ্ছি না।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে একদিনে ভাইরাসটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ৪৯৭ জনে। এ সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ২৭১ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত লাখ ২৩ হাজার ২২১ জনে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ২১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২৪ হাজার ১৫২টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত ১৫ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৩.৩৬ শতাংশ। সেটি কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ২১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২৪ হাজার ১৫২টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত ১৫ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৩.৩৬ শতাংশ। সেটি কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশে
ঢামেকের করোনা ইউনিট-২ এর জরুরি বিভাগের সামনে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটি করলাম। আগে যেমন রোগী নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকত, আজ সে চিত্র দেখা যায়নি। ২-৩ ঘণ্টা পরপর রোগী এসেছে।
চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ঢামেক ছেড়ে বাসায় যাচ্ছিলেন জাহেদা বেগম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি গত ১১ এপ্রিল করোনা পজিটিভ অবস্থায় ৭০২ নম্বর বেডে ভর্তি হই। আজ (সোমবার) সুস্থ হয়ে বাসায় যাচ্ছি। আমাদের ওয়ার্ডে গত দু-তিনদিন ধরে রোগীর সংখ্যা কম দেখেছি। অনেক বেড ফাঁকা আছে।
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগী নামার পর এখানকার (ঢামেক) কর্মচারীদের টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। পদে পদে টাকা দিয়ে সেবা নিতে হয়।’
ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল দেওয়ান বলেন, করোনা রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। ঢাকার বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্সের যাওয়া-আসাও কমে গেছে। লকডাউনের প্রভাবে সংক্রমণ কমায় রোগীর সংখ্যাও কমছে।
ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট-২ এর ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা কম। আগে যেখানে মিনিটে মিনিটে রোগী আসত, সেখানে এখন গড়ে দু-তিন ঘণ্টায় একজন আসছেন। আজ (সোমবার) ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত ১১৭টি বেড ফাঁকা আছে।
বেড ফাঁকা আছে ৯০২ নম্বর ওয়ার্ডে সাতটি, ৯০১ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি, ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়টি, ৮০২-এ তিনটি, ৭০১-এ ১০টি, ৭০২-এ ১২টি, ৬০১-এ ২৫টি, ৬০২-এ আটটি, ৫০২-এ ৩৭টি এবং পিসিসিইউতে চারটি ও সিসিইউতে একটি।
রিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, আজ (সোমবার) সুস্থ হয়ে ঢামেক ছেড়েছেন ৩৫ জন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন।
বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার চিত্র
রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার তাদের কোনো আইসিউ বা নরমাল শয্যা খালি নেই। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড লি. জানায়, তাদেরও কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। তবে, নরমাল শয্যা ফাঁকা রয়েছে। বিশেষায়িত ল্যাবএইড হাসপাতালেও (ধানমন্ডি) কোনো আইসিউ শয্যা ফাঁকা নেই, তবে নরমাল শয্যা ফাঁকা রয়েছে।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা আছে, নরমাল শয্যাও ফাঁকা আছে সেখানে। গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা ফাঁকা নেই।
এসএএ/এইচকে/এমএআর/জেএস