শীতে বাড়ছে সর্দি-কাশি-নিউমোনিয়া, রোগীর চাপ শিশু হাসপাতালগুলোতে
হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে রাজধানীসহ সারা দেশ। ঘন কুয়াশায় দুপুরেও সূর্যের দেখা মিলছে না। কমছে দিনের উত্তাপ। এদিকে দিন কিংবা রাতে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপও বাড়ছে। যাতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে পা ফেলারও জায়গা নেই।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় এড়িয়ে চলতে হয় শীত। প্রয়োজনে নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ।
শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুরুতর নিউমোনিয়া নিয়ে দৈনিক ১৫-২০ শিশু নতুন করে হাসপাতালটিতে ভর্তি হচ্ছে। সোমবার (২২ জানুয়ারি) শিশু হাসপাতালে সর্বমোট ১৩৪ জন ঠান্ডা কাশির রোগী এসেছে। এরমধ্যে নিউমোনিয়ার রোগী ছিল ৩২ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, সব মিলিয়ে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১০০ জন রোগী ভর্তি আছে। এছাড়াও নতুন বছরের জানুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় অনেক শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন অভিভাবকরা। সকাল থেকেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গরম কাপড়ে মোড়ানো শিশুদের কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবকরা।
আরও পড়ুন
তিন মাস বয়সী ওমর ফারুককে নিয়ে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তার মা মিলি। এক মাস ধরেই তিনি তার শিশুসন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, হঠাৎ ঠান্ডা অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ায় ছেলের গলায় কফ জমেছে। এরপর থেকে সে কিছুই খেতে পারছে না। এক মাসে সন্তানের চিকিৎসায় প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও সুস্থ হয়নি সে।
মিলি আরও বলেন, এক মাসে তিনটি হাসপাতাল পরিবর্তন করেছি। ১৪ দিন ধরে শিশু হাসপাতালে আছি। এখনও সন্তানের সুস্থ হওয়ার লক্ষণ দেখছি না।
শিশু হাসপাতালের ২৫ নম্বর বেডে ভর্তি আছে শিশু তাকরিম। ময়মনসিংহ থেকে এসে গত চারদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন মা অন্তরা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বাচ্চার হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। কয়েকদিনেই তার ওজন ৩ কেজি কমে গিয়েছে। কোনোভাবেই সে সুস্থ হচ্ছিল না। প্রতিবেশীদের পরামর্শে তাকে নিয়ে সরাসরি ঢাকায় চলে এসেছি। এখন আলহামদুলিল্লাহ সে সুস্থতার পথে।
শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতকালে ঠান্ডা কাশি বাড়বে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাসপাতালে রোগীও কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা অন্যান্য সময়ের মতোই। অস্বাভাবিক হারে রোগী বাড়েনি।
তিনি বলেন, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে আসা রোগীর অভিভাবকরা বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা দেখে ভর্তি করছেন। বাকিদের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠাচ্ছেন। কিছু কিছু রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় পিআইসিইউতে (পেডিয়েট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা হচ্ছে।
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, শীত ও বায়ুদূষণজনিত রোগীর সংখ্যা বছরের অন্য সময়গুলোর চেয়ে এখন দু-তিন গুণ বেড়ে গেছে। শিশুদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া ও হাঁচি-কাশি নিয়ে। একটা অংশের তীব্র জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ঠান্ডাজনিত রোগে গত এক মাসে দুই লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় ৮৪ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সারা দেশে রোগীদের তথ্যের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শীতকালীন অসুস্থতা হিসেবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়া বড় আকারে দেখা দিয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব রোগে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৪ হাজার ১৭১ জন তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং এক লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
টিআই/পিএইচ