ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১০০ শয্যা ফাঁকা

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক অতিক্রম করেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও হঠাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমেছে। করোনা ইউনিটের ৬০০ শয্যার মধ্যে এখন প্রায় ১০০টি ফাঁকা রয়েছে।

রোববার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে এমন তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।

নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংক্রমণ গত মার্চ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে ঢামেকে একশর বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। গত কয়েক সপ্তাহে ঢামেক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হয়েছে। গত মাসে আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডে আমাদের একটু ধাক্কা খেতে হয়। 

তিনি আরও বলেন, এখন হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এক সপ্তাহ আগে যেখানে করোনার সবগুলো শয্যায় রোগী থাকত, সেখানে এখন প্রায় ১০০টি শয্যা ফাঁকা আছে। ভর্তি হওয়ার পর অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে সামনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমতে পারে। সচেতনতাই একমাত্র সমাধান। এখন শয্যা খালি থাকায় কোনো রোগীকে আর ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। আইসিইউর চাহিদা থাকায় নতুন ১০টি আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। পুড়ে যাওয়া আইসিইউ শয্যাগুলো আবারও চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট-২ এর ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০৮টি শয্যা ফাঁকা ছিল। সন্ধ্যায় আরও ১৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, ৯০২ ওয়ার্ডে ১৪টি, ৯০১ ওয়ার্ডে ১২টি, ৮০১ ওয়ার্ডে ৪টি, ৮০২ ওয়ার্ডে ৯টি, ৭০১ ওয়ার্ডে ১০টি, ৭০২ ওয়ার্ডে ৭টি, ৬০১ ওয়ার্ডে ১৬টি, ৬০২ ওয়ার্ডে ২টি, ৫০২ ওয়ার্ডে ৩২টি ও পিসিসিইউতে ২টি শয্যা ফাঁকা আছে। সিসিইউতে ১২ শয্যা ও ১৯টি কেবিনের একটিও ফাঁকা নেই। 

তিনি আরও বলেন, রোববার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২২ জন। ভর্তি রোগীর মধ্যে চারজন মারা গেছেন।

আরও ১০২ জনের মৃত্যু

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে টানা তিনদিন ভাইরাসটিতে ১০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ৩৮৫ জনে।

এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৯৮ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে।  রোববার (১৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ১২১ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে 

২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৯২৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪০৪টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।

এর আগে শনিবার (১৭ এপ্রিল) করোনায় মারা যান ১০১ জন। শুক্রবারও (১৬ এপ্রিল) ভাইরাসটিতে ১০১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে টানা ৩ দিন করোনায় শতাধিক মৃত্যু হয়েছে দেশে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

এসএএ/ওএফ