হার্ট অ্যাটাকের যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জন্য আগে থেকেই অসুস্থ থাকাটা জরুরি নয়। বরং আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ মানুষেরও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে, হাসপাতালে যেতে দেরি হতে পারে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিভেদে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ ভিন্ন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ক্লাসিক বা চিরাচরিত যে উপসর্গ অর্থাৎ বুকে ব্যথা, সেটি নাও থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে মাত্র একটি উপসর্গ থাকতে পারে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে একাধিক উপসর্গও থাকে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কোনো সতর্কতামূলক উপসর্গ থাকে না। তবে আপনার চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে, আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। একে বলা হয়, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।
সংস্থাটি সতর্ক করে বলছে যে, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ যদি আপনার দেখা দেয়, তাহলে দেরী না করে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ এই রোগে জীবন বাঁচাতে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব লক্ষণগুলো হচ্ছে-
বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের প্রথম উপসর্গই হচ্ছে বুকে ব্যথা। বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হবে না। একেবারে বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা হবে। একে ‘সেন্ট্রাল চেস্ট পেইন’ বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এই ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বুকে তীব্র ব্যথার সাথে সাথে যদি চরম অস্বস্তিবোধ থাকে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
হাত ও ঘাড় ব্যথা
বুকের ব্যথা একসময় বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যাকে বলা হয় ‘ব্যথাটা রেডিয়েট’ করা। ব্যথা ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়লে মনে হবে যেন গলার মাংসপেশি কেউ চেপে ধরছে।
যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ব্যথা বোঝার ক্ষমতাটা কম থাকে। যার কারণে তাদের অনেক সময় বড় ধরণের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলেও তারা টের পান না।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডেভিড নিউবি বলেন, যদি আপনার বাম হাতে ব্যথা নিচের দিকে নামতে থাকে এবং সেই সাথে গলায় চেপে ধরা ভাব থাকে তাহলে সেটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ।
এই ব্যথা যদি চলে না যায়, আর এর আগে যদি হার্টের কোনো ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
তার মতে, যদি গলায় কোনো কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হয়, সেই সাথে গলা ধরে আসে, কোনো কিছু গিলতে সমস্যা হয়, ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে সেটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। এ ছাড়া যদি চোয়াল ও পিঠেও ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে সেটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। নারীদের মধ্যে এই উপসর্গ বেশি দেখা দেয়।
পেটে তীব্র ব্যথা
বুকের প্রচণ্ড ব্যথা অনেক সময় পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথাকে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে বেশিরভাগ সময় তারা বুঝতে পারে না যে সেটি আসলে কীসের ব্যথা।
কাশি ও শ্বাসকষ্ট
যদি হার্ট অ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের দিকে যায় তাহলে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। হার্ট ফেইলর হলে বা অকেজো হয়ে পড়লে ফুসফুসে পানি আসে। এর কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা যদি জরুরি ভিত্তিতে না নেওয়া হয়, তাহলে হার্ট আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন সারা দেহে পানি এসে পড়ে।
এর মধ্যে প্রথমেই পানি আসে ফুসফুসে। এর ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। এটি হার্ট অ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের একটা উপসর্গ।
অতিরিক্ত ঘাম
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শরীর চর্চা করার সময় বা খুব গরমে যদি ঘাম হয় তাহলে সেটা স্বাভাবিক।
কিন্তু যদি বুক ব্যথার সাথে সাথে প্রচণ্ড ঘাম হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ সেটি হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ।
অনেক সময়ে একজন ব্যক্তির মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের একাধিক উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন, বুকে ব্যথার সাথে সাথে ঘাম শুরু হয়, অস্থির লাগে।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, দুর্বল অনুভব হওয়া, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
বুকের ব্যথা অনেক সময় এতটা তীব্র হতে পারে যে, এতে আক্রান্ত রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটাও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
বমি বমি ভাব ও বমি
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, বমি বমি ভাব কিংবা বমি শুরু হলেই যে সেটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ তা নয়। তবে যদি বমির সাথে বুকেও তীব্র ব্যথা ও অস্বস্তি থাকে, তাহলে সেটা হার্ট অ্যাটাকের একটি উপসর্গ হতে পারে।
এছাড়া ক্লান্তিও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, যদি তেমন কোনো কারণ ছাড়াই বমি শুরু হয় এবং কারণ ছাড়াই ক্লান্ত বোধ হয়, সাথে যদি বুকে ব্যথা থাকে, তার মানে এটা হার্ট অ্যাটাকের কারণে হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো বেশি দেখা দেয়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
এনএফ