সুন্নতে খৎনা করাতে এসে জীবন-সংকটে শিশু আয়ান
রাজধানীর বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে এসেছিল শিশু আয়ান। সাধারণ একটা অস্ত্রোপচার করাতে এসে এখন মুমূর্ষু অবস্থা পাঁচ বছরের এ শিশুর। উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে। স্বজনদের অভিযোগ, এনেসথেসিয়া প্রয়োগের ভুলের কারণে শিশু আয়ানের জীবন এখন সংকটাপন্ন।
জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডা মাদানী অ্যাভিনিউয়ের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ। সেখানে তাকে অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। তিনদিন পার হয়ে গেলেও শিশু আয়ানের জ্ঞান এখনো ফেরেনি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
শিশু আয়ান ঢাকার পূর্বাচলের জলসিড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের নার্সারির ছাত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশুটিকে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. সাব্বির আহমেদ। আর সার্জারি করেছেন ডা. মেহজাবীন।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাচ্চার সুন্নতে খৎনা করাতে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর বাচ্চাটিকে প্রথমে এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। এরপর সেখানে ওই অবস্থায় তাকে দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ২ ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হয়। শেষের দিকে যখন তারা বাচ্চার পালস পাচ্ছিল না, তখন ডাক্তাররা আয়ানের বুকে বার বার চাপ দিচ্ছিল। তখনই আমরা বুঝতে পারি, কিছু একটা ভুল হয়েছে।’
‘কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়— উন্নত চিকিৎসার জন্য আয়ানকে গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেখানে নিয়ে যায়।’
শিশুর বাবা আরো বলেন, ‘আজ চারদিন হলো তাকে পিআইসিইউতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তার কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকে ডাক্তাররা আমাদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলছে, আমাদের সন্দেহ হচ্ছে— বাচ্চা বেঁচে আছে কি না। আমার আর কোনো চাওয়া নেই, আমার বাচ্চাকে আমি জীবিত ফেরত চাই।’
শিশু আয়ানের স্বজন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সুন্নতে খৎনা কী এমন জিনিস, যেটা করতে গেলে বাচ্চাটিকে একেবারে পিআইসিইউতে নিয়ে যেতে হয়? তার মানে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে। তারা তাদের শিক্ষার্থীদের শেখাবে, এজন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এনেসথেসিয়া দিয়ে ফেলে রাখবে- আমরা তো এজন্য হাসপাতালে যাইনি। ভালো এবং সহজ সেবা পাওয়ার জন্যই সেখানে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে বাচ্চাটির এই অবস্থা হয়ে যাবে কেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা রিপোর্ট-কাগজপত্রসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপর তিনি তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড হাসপাতালে কর্তব্যরত এনেসথেসিয়া বিভাগের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি শিশুটির ক্ষেত্রে ভুল এনেসথেসিয়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে আমরা জেনেছি। বাচ্চার যদি এখন কিছু হয় তাহলে এর পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।’
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, ‘পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা, তাকে যে ফুল এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছে, তার অভিভাবক থেকে কি অনুমতি নেওয়া হয়েছে? আমিও আমার বাচ্চার সুন্নতে খৎনা করেছি, তাকে তো ফুল এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি। তাহলে আয়ানকে কেন দেওয়া হয়েছে? তারা কি তাদের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করানোর জন্য শিশু আয়ানকে বলি দিয়েছে? এটা কেমন অমানবিক কাজ?’
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাই সহযোগিতা করবেন, যেন ক্ষমতাবলে ছাড় না পেয়ে যায়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সাব্বির আহমেদ এবং ডা. মেহজাবিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
শিশু আয়ানের ভুল চিকিৎসা প্রসঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শিশুটি এখনো আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মৃত্যুর বিষয়ে এখনো আমরা কিছু জানি না। সুতরাং, এই খবরটা কোথা থেকে এল, সেটা বুঝতে পারছি না। আমরা তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি, সেই বোর্ডের অধীনে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাটাই তাকে দিচ্ছি।’
সুন্নতে খৎনা করাতে এসে একেবারে লাইফ সাপোর্টে চলে যাওয়া ‘অস্বাভাবিক’ ঘটনা কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে চিকিৎসায় একটি জটিলতা হয়েছে আমরা শুনেছি। বাচ্চা যখন সুন্নতে খৎনার জন্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে এসেছিল, সেখানে তাকে এনেসথেসিয়া দেওয়ার সময় একটি শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে তাকে সেখান থেকে আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’
আরিফুল হক আরো বলেন, ‘ভুল চিকিৎসার বিষয়টি এভাবে বলা যাবে না। অভিযোগটি আমাদের কাছে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে চিকিৎসায় কোনো ভুল হয়েছিল কি না।’
টিআই/এমজে