বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধীন ওবেসিটি ক্লিনিকে আসা রোগীদের মধ্যে ‘জিএলপি-১’ রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট ধরনের ওষুধ প্রয়োগে আশানুরূপ ফল এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিএসএমএমইউয়ের ‘আপডেট ম্যানেজমেন্ট অব ওবেসিটি’ শীর্ষক সিএমই সেমিনারে এই দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানিয়া হক, ফেজ-বি রেসিডেন্ট ডা. রাকিব মিয়া ও ডা. নিলুফার ইয়াসমিন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে দিন দিন দৈহিক স্থূলতা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের সেবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ও অবকাঠামো তৈরি করা যায়নি। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধীনে ওবেসিটি ক্লিনিক এসব রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

আরও বলা হয়, গত এক বছরে এই ক্লিনিকে বিভিন্ন বয়সের শত শত রোগীর মাঝে ৫০ জন জন ওবেসিটি রোগীকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এই রোগীদের মাঝে মাত্র ২১ জন রোগী নিয়মিত ওবেসিটি ক্লিনিকের ফলোআপে থেকেছেন। এই ফলোআপে থাকা রোগীদের মাঝে জিএলপি-১ অ্যাগোনিস্ট ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এই ওষুধের পাশাপাশি রোগীদের ডায়েট চার্ট ও শারীরিক পরিশ্রম করার জন্য বলা হয়। এর ফলে তারা আশানুরূপ আরোগ্য লাভ করেছে।

বক্তারা বলেন, মেদাধিক্য বা ওবেসিটি হলো শরীরের এক বিশেষ অবস্থা, এই অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। এর ফলে আয়ু কমে যাওয়াসহ একইসঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, শুয়ে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, অস্টিওআর্থারাইটিস এর মতো রোগও দেখা দিতে পারে।

তারা বলেন, কম বয়সী নারী রোগীদের অনিয়মিত মাসিক ও শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন হতে পারে। অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব, বংশ পরম্পরায় জিনগত বৈশিষ্ট্য থেকে প্রাপ্ত গুণাবলী, কিছু ক্ষেত্রে জিনের চরিত্রের পরিবর্তন, হরমোন গ্রন্থির গণ্ডগোল, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদিকেই স্থূল বা মোটা হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন রোগীদের সেবার মান ও যথাযথ সেবা প্রদানে আন্তরিক। বর্তমান প্রশাসন রোগীদের সেবার জন্য বিভিন্ন ধরণের গবেষণামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রোগীদের ক্যাটাগরি করে বিভিন্ন ক্লিনিক চালু করেছে।

তিনি বলেন, এ ক্লিনিকগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধীনে ওবেসিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এই ক্লিনিকের সেবা পেয়ে অনেক রোগী আজ স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরেছেন।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে গবেষণা ও গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার গবেষকরা দেশের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন। এতে  স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম। সেমিনারটি সঞ্চালন করেন মেডিকেল অফিসার ডা. মিতা দত্ত।

এছাড়াও সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে হিসেবে মতামত প্রদান করেন নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম,  ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশীষ চক্রবর্তী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিন জাহান।

টিআই/এসকেডি