জীবনের প্রথম ১০ বছরে প্রায় ১৫০ শিশুর মধ্যে একজনের মৃগী রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশে মৃগী রোগের প্রকোপ প্রতি ১ হাজার জনে ৮ দশমিক ৪ জন। শিশুদের মধ্যে মৃগীরোগ বেশি দেখা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের মৃগীরোগ সিনড্রোম পাওয়া যায়। প্রতিটি ধরনের চিকিৎসা এবং আরোগ্য সম্ভাবনা নির্দিষ্ট ধরনের আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের ‘অসচেতনতায়’ ভয়াবহ আকার ধারণ করে মৃগী রোগ।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃগী সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজীদা আহমেদ একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলা হয়, মৃগী রোগ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সাধারণ স্নায়ুবিক রোগ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃগীরোগ রয়েছে। মৃগীরোগে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ লোক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে। এটি অনুমান করা হয় যে মৃগীরোগে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ খিঁচুনি মুক্ত থাকতে পারে যদি সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়।

এতে বলা হয়, কিছু মৃগীরোগ ওষুধের মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য। কিছু মারাত্মক ধরনের মৃগী রোগ আছে যা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। খিঁচুনির ওষুধ ছাড়াও কিছু বিকল্প চিকিৎসা বিদ্যমান রয়েছে। বিকল্পগুলো হলো কিটোজেনিক ডায়েট, ইমিউনোথেরাপি, নিউরোস্টিমুলেশন, এপিলেপসি সার্জারি।

বক্তারা বলেন, মৃগী রোগ সম্পর্কে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিশুদের মৃগী রোগ শুরুতেই নির্ণয় করা সম্ভব হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা হলে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এসময় তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন মানুষ মৃগী রোগে আক্রান্ত। এই রোগ যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। যদি কোনো শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয় সমাজ তাকে অস্পৃশ্য ভাবে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। এ রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়।

উপাচার্য বলেন, এ রোগ যদি শুরুতে ধরা যায় ও চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ করা যায়। এ রোগের সব ধরনের চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু নিউরোলজি বিভাগ ও ইপনায় হয়ে থাকে।

শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যত অর্জন সব কিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার যোগ্য উত্তরসূরি দ্বারাই অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাই। তার অনুমতি সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সংবর্ধনা দিতে চায়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, শিশু নিউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান।

সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু নিউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইপনার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইপনার ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ডা. মাজহারুল মান্নান।

টিআই/এসএম