‘ডিএসএ’র কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক মানদণ্ডে পিছিয়ে দেশ
তামাক নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর পিছিয়ে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ (ডিএসএ) রাখার সুযোগকে দায়ী করছেন তারা।
এ অবস্থায় বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে আইন সংশোধনের দাবি জানান বিশেষরা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও সন্ধানীর যৌথ আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান।
লিখিত বক্তব্যে সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ডা. তাহসীন আলম সায়েম বলেন, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকলে অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
তাই বিদ্যমান আইনে ডিএসএ রাখার বিধান বাতিল করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করেছে।
ডা. তাহসীন আলম বলেন, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের (২০০৫) দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর ১২ লাখ মানুষ সরাসরি ধূমপান না করে শুধু ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের নবম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাই জনস্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত আইনটি সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
এসময় সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, বর্তমান আইনে বিক্রয় স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তরুণ ও শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিক্রয় স্থলের দৃশ্যমান স্থানে তামাক পণ্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।
তরুণদের সুরক্ষায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ বিক্রয় স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেরও বিক্রয় স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিক দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আওসাফ তাজওয়ার, সন্ধানীর উপদেষ্টা কাজী আয়েশা সিদ্দিকা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসার ডা. জুবাইদা আখতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলো হলো; সব ধরনের পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংশোধনীগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি) নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা; সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি (৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে বৃদ্ধি করা) ও প্লেইন প্যাকেজিংসহ তামাকজাত দ্রব্য মোড়কজাতকরণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করা।
টিআই/কেএ