বিয়ের আগে জরুরি কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার, নয়তো জীবনে ঘটে যেতে পারে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিয়ের আগে যেসব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত-

১. হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস

এ পরীক্ষার মাধ্যমে বর বা কনে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কি না, কিংবা এই রোগের বাহক কি না, জানা যায়। বর ও কনে দুজনেই এই রোগের বাহক হলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার মতো দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। তাই অনাগত সন্তানের কথা ভেবে থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়।

২. ব্লাড গ্রুপিং এবং আরএইচ টাইপিং

হবু বর-কনের রক্তের গ্রুপ একই হলে সন্তান ধারণে কোনও সমস্যা হয় না। তবে রক্তের গ্রুপের রেসাস বা আরএইচ ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (অর্থাৎ রক্তের গ্রুপ পজিটিভ নাকি নেগেটিভ)। কেননা মা আরএইচ নেগেটিভ, কিন্তু বাবা আরএইচ পজিটিভ হলে অনাগত সন্তান পেটের মধ্যে থাকা অবস্থায় ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস নামে মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তবে মা আরএইচ নেগেটিভ, কিন্তু বাবা আরএইচ পজিটিভ হলেও প্রথমবার গর্ভধারণের সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিলে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব।

৩. যৌনবাহিত রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা

এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি মারাত্মক রোগগুলো স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিয়ের আগে এসব রোগ শনাক্তকরণ ও যথাযথ চিকিৎসা হবু বর-কনে দুজনকেই নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী রাখে এবং পরবর্তী সময়ে সন্তানের মধ্যে এসব রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

৪. বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা

বন্ধ্যত্ব সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী উভয়েরই বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ও সংখ্যা পরীক্ষা এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাফি ও বিভিন্ন হরমোন, যেমন থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন বা টিএসএইচ, প্রলেকটিন, টেস্টোস্টেরন, ফলিক্যাল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ, লুটিনাইজিং হরমোন বা এলএইচ ইত্যাদি পরীক্ষা করানো যেতে পারে।

৫. বংশগত রোগের পরীক্ষা

বংশগত রোগগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তার লাভ করে। তাই বিয়ের আগে, বিশেষ করে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের আগে বংশগত রোগের পরীক্ষা করানো উচিত।

৬. ক্রনিক রোগ স্ক্রিনিং

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে পাত্র-পাত্রী দুজনেরই জেনে নেওয়া উচিত, কেউ এসব রোগে ভুগছেন কি না এবং অপরকে জানানো উচিত।

৭. মানসিক রোগ

অনেকেই মনে করেন বিয়ে করলেই মানসিক রোগ ঠিক হয়ে যাবে, যা একেবারেই সঠিক নয়। সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগ বিয়ের আগেই শনাক্ত করে চিকিৎসা করানো উচিত এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে তাদের বিয়ে দেওয়া উচিত।

এমজে