এবার নারীদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এসেছে নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক)। ‘উইমেনস ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ নামক একটি বিশেষ কর্মসূচির আওতায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও সামাজিক পর্যায়ে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক দিক-নির্দেশনা দেবে সংগঠনটি।

শনিবার (৭ অক্টোবর) নারী উদ্যোগ কেন্দ্র আয়োজিত “নারীদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি” উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন শেফালীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হালিদা হানুম আখতার ও ক্যান্সার রোগতত্ত্ববিদ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের উইমেন্স ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রামের পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট সাংবাদিক হামিম কবির, নাসরিন সুলতানা, জান্নাতুল ফেরদৌসী মানু, ইয়াসমিন পিউ, ইসমত জেরিন স্মিতা ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোসাররত সৌরভ, সেক্রেটারি ইকবাল মাহমুদ, উন্নয়ন ধারার নির্বাহী পরিচালক মাহবুব শওকত এবং নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ‘উইমেনস ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ নামক একটি বিশেষ কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও সামাজিক পর্যায়ে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হবে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল ও সমাজভিত্তিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে। এ কার্যক্রমটি প্রাথমিকভাবে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও বলা হয়েছে, কিশোরগঞ্জ জেলা শহর, পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়ন ও ঢাকার সাভারে অবস্থিত মোট তিনটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজভিত্তিক ক্যান্সার সেবা চালু করা হবে। টেলিমেডিসিনের সহায়তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন শেফালী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকাল, তিন দশকের কার্যক্রম ও নারীদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভিন্ন দিক ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র একটি বেসরকারি নারী উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন। সমাজের সর্বস্তরে নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ নারী-পুরুষের সমতা ও গ্রামীণ দরিদ্র নারী জনগোষ্ঠীর দারিদ্রতা বিমোচন তথা নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার নারীদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের অসচেতনতা ও সংকোচবোধের কারণে ক্যান্সার অনেক দেরিতে ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। সমাজভিত্তিক ক্যান্সার সেবা এর উত্তরণ ঘটাতে পারে। তিনি জানান, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা আছে সমাজভিত্তিক চক্ষু সেবা প্রদানের। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমাজভিত্তিক ক্যান্সার সেবার বাস্তব প্রয়োগে একটি দিশারী ভূমিকা পালন করতে পারে।

অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার আরও জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে কোন সংগঠিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি নেই। অপরচুনিস্টিক বা অসংগঠিত স্ক্রিনিং চালু আছে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালে শুধু জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য। নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জের জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের সমন্বিত ও সংগঠিত স্ক্রিনিংয়ের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। 

ড. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, নারীর ক্যান্সারের পাশাপাশি পুরুষদের ক্যান্সার নিয়েও কথা বলতে হবে, যেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ক্যান্সার প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসার বিষয়ে সচেতন হন।

টিআই/এমজে