একটু সচেতন হলেই সিপিআরের (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের পর ১০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর মধ্যে প্রথম ৫ মিনিটে চিকিৎসা না নিতে পারলে সমস্যা জটিল হয়ে যায়। আর ১০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু অনিবার্য। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই সিপিআরের মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত মৃতপ্রায় ব্যক্তিকেও বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিষয়ক সচেতনতা ও সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু রেজা মো. কাইউম খান। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল ব্যানার্জী। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হেলোর উপদেষ্টা এবং অতিরিক্ত সচিব (অব.) মশিউর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের অধ্যাপক ও হেলোর প্রতিষ্ঠাতা ডা. মহসীন আহমদ এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। কর্মশালায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আসিফ জামান তুষারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের সিপিআর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর পেছনে সিপিআরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নতবিশ্বে এই গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়েছে বিধায় সেখানে সিপিআর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা সহজেই প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং সিপিআর সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা না থাকায় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিপিআর প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে সিপিআর ট্রেনিং দিতে পারলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে একজন বিশেষজ্ঞ তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পাঠ্য পুস্তকে এটি পড়ানো যেতে পারে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে অসংখ্য কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষা পাবে।

অধ্যাপক ডা. সজল ব্যানার্জী বলেন, পৃথিবীর মোট বৈশ্বিক মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো হৃদরোগ। যদিও আমাদের মধ্যে এই ধারণা প্রচলিত যে, উন্নত বিশ্বেই হৃদরোগের প্রকোপ বেশি, তথাপি দেখা গেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর শতকরা আশি ভাগই হয়ে থাকে মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। হৃদরোগের প্রাথমিক কারণের মধ্যে রয়েছে কিছু জীবন-অভ্যাস যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং ধূমপান। তবে এসমস্ত অভ্যাসই পরিবর্তনযোগ্য। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবামূলক কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে অনেকাংশেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, সিপিআর একটি জীবন রক্ষাকারী কৌশল যার মাধ্যমে এই মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। একারণেই উন্নত বিশ্বে জনসাধারণের মধ্যে সিপিআর ট্রেনিংয়ের ওপর অনেক জোর দেওয়া হয়। সে তুলনায় আমাদের দেশে এ ব্যাপারে সচেতনতা অনেক কম। এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত।

হেলোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমদ বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর পেছনে সিপিআর’র ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নতবিশ্বে এই গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়েছে বিধায় সেখানে সিপিআর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা সহজেই প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং সিপিআর সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা না থাকায় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই হেলো কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল পাঠ্যতালিকায় সিপিআর অন্তর্ভুক্তির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আশা করছি শিগগিরই আমরা তা বাস্তবায়নে সক্ষম হব।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। তার মধ্যে একটি বড় অংশ হলো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। দেখা যায় যেকোনো ব্যক্তি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুহার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার মানুষ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মারা যান।

টিআই/এমএ/