কোন সিগন্যালে আটকা ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’?
চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুলে রোগীর মৃত্যু থেকে শুরু করে নানা জটিলতার খবর প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে প্রতিনিয়ত রোগীর স্বজনদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। আবার সুনির্দিষ্ট কোনো আইন-বিধান না থাকায় দেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে পকেট কাটছে রোগীদের।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসব অনিয়ম-অস্থিরতা রুখতে ২০১৪ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন’ প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে, আইনটি নানা জটিলতার ‘গ্যাঁড়াকলে’ আটকা পড়েছে। বিভিন্ন সময় একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইনটি পাস না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এ পেশার সঙ্গে যুক্তরা। এ অবস্থায় আইনটি প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব হয়তো চান না আইনটি পাস হোক। এটি পাসের ক্ষেত্রে তাদের (স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব) সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তা না হলে বারবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফেরত পাঠানোর কথা নয়।
কোন অবস্থায় ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০২৩ এর খসড়ার ওপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়’ কমিটির তৃতীয় সভার সুপারিশের আলোকে পরিমার্জিত খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ২৭ জুলাই মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সর্বশেষ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সব অতিরিক্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : নিজেদের সুরক্ষা আইনেও কেন ‘সুরক্ষাহীন’ চিকিৎসকরা?
সভায় সবার পরামর্শের আলোকে একটি পরিমার্জিত খসড়া প্রণয়ন করা হয়। একই সঙ্গে সভায় আসন্ন সংসদেই আইনটি পাসের ব্যাপারে আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সুরক্ষা আইনে ‘তালগোল’ পেকেছে, তাই পাসে দেরি : ডা. তুষার
বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক নেতা ডা. আব্দুন নূর তুষার ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনটি নিয়ে একটা ‘তালগোল’ পাকানো হয়েছে। এ আইনে চিকিৎসকদের সুরক্ষার কথা বলা হলেও চিকিৎসকদের কোনো সুরক্ষাই প্রাধান্য পায়নি। যে কারণে আইনটি নিয়ে চিকিৎসক সমাজে ক্ষোভ রয়েছে। বিষয়টি উপলব্ধি করেই হয়তো আইনটি সামনে এগোচ্ছে না।
‘আইনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন অপরাধ ও ফৌজদারি আইনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকদের অপরাধ কখনওই ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে না। কোনো চিকিৎসক নিশ্চয়ই রোগীকে হত্যার জন্য গিয়ে চেম্বারে বসেন না। মৃত্যু একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। যেকোনো মানুষের যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। তাই বলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে?’
ডা. তুষার বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের চেম্বার ও হাসপাতালের যেখানে ইচ্ছা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবে, এটা তো কখনওই উচিত নয়। মোবাইল কোর্ট ঢোকা মানেই হাসপাতালে চিকিৎসা বিঘ্নিত হওয়া। হাসপাতাল হলো একটি সেনসিটিভ জায়গা, বাজার বা চাল-ডালের গোডাউন নয়। অপারেশন থিয়েটারে সবসময় একাধিক রোগী থাকে। এ সময় যদি অপারেশন থিয়েটারে যন্ত্রপাতি দেখতে মোবাইল কোর্ট ঢোকে এবং তাদের মাধ্যমে ভেতরে জীবাণু ছড়ায়, এতে রোগীর কোনো ক্ষতি হলে সে দায় কি মোবাইল কোর্ট নেবে, না-কি সরকার নেবে?’
আরও পড়ুন : এনার্জি ড্রিংকস : ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
‘ধরেন, মোবাইল কোর্ট আমার একটি হাসপাতালে আসল। এসে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা, মালিকদের ডেকে আনল এবং নানা ধরনের প্রশ্ন করল, কিন্তু অবশেষে কিছুই পেল না। এ সময়ে যে রোগীর সেবা বিঘ্নিত হবে, এর দায় কে নেবে? এ ছাড়া তারা তো আবার সবসময় সঙ্গে সাংবাদিক-ক্যামেরা নিয়ে আসেন, অভিযান পরিচালনা করলেন কিন্তু কোনো সমস্যা পেলেন না; তাহলে অভিযান চলাকালীন বিভিন্ন টেলিভিশন-পত্রিকায় যে লাইভ হবে, নিউজ হবে, এতে করে হাসপাতালের যে সুনাম নষ্ট হবে, মানুষের মধ্যে একটি নেগেটিভ ধারণা জন্মাবে; এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? সুতরাং বিষয়টি কখনওই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এতে করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। সবমিলিয়ে রোগীর সেবা ব্যাহত হবে, রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
চিকিৎসকদের দাবিগুলো আলোচনার টেবিলেই থমকে যায় : বিডিএফ চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ ডক্টরস’ ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের যতগুলো সংগঠন আছে, সবার পক্ষ থেকে আইনটি পরিবর্তনের দাবি তোলা হয়েছে। কিন্তু কেন যেন দাবিগুলো আলোচনার টেবিলে থমকে আছে। নিয়মিত মিটিংগুলোতে এসব বিষয় বারবার তোলা হলেও আইনে সেগুলো কখনওই প্রতিফলিত হয় না। যে কারণে এটি দীর্ঘদিন ধরে আলোর মুখ দেখছে না।’
‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে দুটি পার্ট রয়েছে। একটি হলো রোগীর সুরক্ষা, আরেকটি ডাক্তার ও হসপিটালের সুরক্ষা। সবমিলিয়ে একটি কম্বাইন্ড ল করছে সরকার। আমাদের পাশের দেশ ভারতে যে আইনটি আছে, সেটিতে সবচেয়ে বেশি ডাক্তারদের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে যে আইনটি করা হয়েছে, সেটিতে ডাক্তারদের কোনো চাওয়ার প্রতিফলন হচ্ছে না।’
ডা. পাভেল বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সবসময় আজ্ঞাবহ থাকে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইন নিয়ে সরকারের যতগুলো মিটিং হয়, সেগুলোতে চিকিৎসকদের অধিকার-দাবি নিয়ে অ্যাক্টিভ সংগঠনগুলোর থাকার সুযোগ হয় না, থাকে শুধু বিএমএ আর স্বাচিপ। অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পার্টিকুলার মতামত নেওয়ার যে বিষয় থাকে, সেটি আসলে কতটুকু তারা নিয়েছে, আমাদের জানা নেই। পুরো আইন সম্পর্কে ধোঁয়াশায় আছি আমরা। কে আসলে মিটিংয়ে বসছে, মিটিংয়ে কী আলোচনা হচ্ছে— এগুলোর বিষয়ে আমরাও ক্লিয়ার না।’
আইনটির বাস্তবায়ন হোক স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান না, নয়তো আমলারা চান না : বিএমএ মহাসচিব
চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সর্বশেষ যতটুকু খোঁজ নিয়ে জেনেছি, স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইনের কোনো অগ্রগতি হয়নি। অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হলো হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইনটি চান না, নয়তো আমলারা চান না। তবে আমি মনে করি, আইনটি এখনও আলোর মুখ না দেখার পেছনে দুটি পক্ষই দায়ী। কারণ, যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাহেব ছিলেন, তখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। এমনকি তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা এ আইনের কাজ শেষ করি। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ বছর হতে চলেছে। আইনটি নিয়ে যদি বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনো সদিচ্ছা থাকত, তাহলে এ সময়ের মধ্যেই তা পাস হয়ে যেত।’
আরও পড়ুন : চিকিৎসক সংকট কাটাতে আসছে ‘বড় নিয়োগ’
বিএমএ মহাসচিব বলেন, ‘প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়কে সরকারপ্রধান দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের যে আইনগুলো যুগোপযোগী বা নতুন করে করা দরকার, সেগুলো যেন তারা করে ফেলে। কাজটা তো স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের। আমাদের মন্ত্রী যেহেতু আইনটি আলোর মুখ দেখাচ্ছেন না, সুতরাং আমরা ধরেই নেব যে মন্ত্রী, সচিব ও আমলারা যৌথভাবে আইনটি আলোর মুখ দেখুক, সেটি তারা চান না।’
‘চিকিৎসকরা নিরাপদে কাজ করুক, তাদের কর্মস্থল নিরাপদ হোক, সেটি আমলারা চান না। অথচ পাশের দেশসহ পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে আইনটি বিদ্যমান রয়েছে এবং প্রতি বছরই এগুলো যুগোপযোগী করা হয়। অথচ আমরা আইনই তৈরি করতে পারিনি, যুগোপযোগী তো পরের কথা।’
প্রতিনিয়ত হাসপাতালগুলোতে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছু লোক হাসপাতাল ভাঙচুর করছে, চিকিৎসকদের ওপর হামলা করছে। দিনদিন মানুষ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব কারণে চিকিৎসকরাও ধীরে ধীরে সংক্ষুব্ধ হচ্ছেন। যদি স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইনটি যুগোপযোগী করে প্রয়োগ করা হতো, একটি সুন্দর পরিবেশে রোগীরা চিকিৎসা পেতেন, ডাক্তারদের জন্যও কর্মস্থল নিরাপদ হতো— বলেন তিনি।
চলতি মেয়াদে আইন পাসের সম্ভাবনা নেই : স্বাচিপ সভাপতি
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের এ মেয়াদে আইনটি পাসের কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। কারণ সামনে নির্বাচন, ইতোমধ্যে নির্বাচনী নানা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে একটি মাত্র সংসদ অধিবেশন আছে। এ সময়ের মধ্যে আমি আর কোনো সুযোগ দেখছি না।
আরও পড়ুন : ‘কাগুজে বাঘ’ বিএমডিসি, ২০% চিকিৎসকের নিবন্ধন মেয়াদোত্তীর্ণ!
‘আইন পাসের বিষয়ে মন্ত্রী নানা প্রোগ্রামে বলে বেড়ান। আমার মনে হয়, বলার জন্য তিনি বলেন। আর মাত্র একটি সংসদ আছে। বললেই এ সময়ের মধ্যে একটি আইন পাস করে ফেলা সম্ভব? আইন এত সহজ নাকি? কেবিনেটে উঠবে, তারপর আইন মন্ত্রণালয়ে মিটিং হবে, এরপর সংসদে যাবে; এ রকম বহু ব্যাপার আছে।’
দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স’ আইনটিকে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কারণে এটি দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়েছে। কারণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আর মেডিকেল প্রাইভেট অর্ডিন্যান্স আলাদা দুটি জিনিস। এ আইনে এখন দুটি জিনিসকে এক করা হয়েছে। এটিকে কেন ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে যোগ করে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি না।
ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সব কাজ সম্পন্ন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পর আইনটি আবার কেন ফেরত এসেছে, সেটিও বুঝতে পারছি না। এর আগেও কিন্তু দুবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে থেকে ফেরত এসেছে। আমি নিজে এটি নিয়ে কাজ করেছি, এর আগের সভাপতি ইকবাল ভাইও কাজ করেছেন। আমরা সংশোধন করে কেবিনেটে পাঠালাম, সেখান থেকে আবার ফেরত পাঠাল। এরপর আরও কিছু কাজ করে আবার পাঠালাম, এখন তৃতীয়বারের মতো পাঠিয়েছে।’
বেশি কাটাছেঁড়ার কারণে আইন পাসের প্রক্রিয়া পিছিয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টের প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠান।
কেন আলোর মুখ দেখছে না স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন নিয়ে অসংখ্যবার আলোচনা হয়েছে। অনেক বেশি কাটাছেঁড়া হয়েছে। এত বেশি আলোচনা হয়েছে বলেই আইনটি পিছিয়ে আছে। আশা করছি, আগামী সংসদ অধিবেশনেই আইনটি উত্থাপন করা হবে এবং খুব শিগগিরই আইনটি পাস হবে।
আরও পড়ুন : সেন্ট্রাল হসপিটালের ভুলে মৃত্যুপথযাত্রী আঁখি, হারালেন নবজাতক
‘মাঝেমধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। নৃশংসতা ঘটে। অনেক সময় ভুল চিকিৎসা ও বিলম্বে চিকিৎসাও হয়। চিকিৎসক ও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা কমিয়ে আনতে এবং রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে আইনটি জরুরি। এটি পাস হলে রোগী, তার স্বজন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সবাইকে মেনে চলতে হবে। রোগী ও চিকিৎসক— অপরাধ যেই করুক, তার বিচার যেন দ্রুত হয়। বিচার বিলম্বে হলে লোকজন আস্থা হারিয়ে ফেলেন। আইনের বাস্তবায়ন না হলে তারা (সাধারণ মানুষ) আইন হাতে তুলে নেন।’
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে জেল-জরিমানা থাকায় ভুল চিকিৎসা অনেকাংশে কমে যাবে— উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসায় যদি কারও ভুল হয়, কিংবা অবহেলা থাকে, সেখানে শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। অপরাধ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে আর্থিক থেকে শুরু করে জেলের বিষয়টিও রয়েছে। এতে সমস্যা কমে আসবে অনেকাংশে।’
আরও পড়ুন : ওষুধে ফতুর মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত
‘রোগীর সুরক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে কাজ শুরু হয়েছে। যারা হাসপাতালে সুরক্ষা নেন, তাদের সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগী যেন হাসপাতালে এসে সঠিক চিকিৎসা পান; যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন নেই সেটি যাতে করা না হয়, অপারেশন হলে যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব না থাকে— আমরা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। এটি (স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন) কেবিনেটে অনুমোদন পেয়েছে।’
জাহিদ মালেক আরও বলেন, যখন একটি আইন করা হয়, তখন সব মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মতামত নেওয়া হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসি। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও বাইরের দেশের আইনও বিবেচনায় রাখা হয়। আমাদের আইন অনেক আধুনিক আইন হবে। এতে সব বিষয় স্থান পাবে।
টিআই/এসকেডি/